কুম্ভ মেলা: ইতিহাস, উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য
কুম্ভ মেলা হলো হিন্দু ধর্মের অন্যতম বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব, যা পৌরাণিক কাহিনির ওপর ভিত্তি করে উদযাপিত হয় । এই মেলার মূল ধারণা অমৃত আহরণের গল্পের সঙ্গে জড়িত । হিন্দু পুরাণ অনুসারে, একসময় মহর্ষি দূর্বাসার অভিশাপের ফলে ইন্দ্র ও দেবতারা দুর্বল হয়ে পড়েন এবং অসুরদের দ্বারা পরাজিত হন । এই অবস্থায় ভগবান বিষ্ণুর পরামর্শে, দেবতা ও অসুররা একত্রে ক্ষীরসমুদ্র মন্থন করে অমৃত আহরণের উদ্যোগ নেন ।
সমুদ্র মন্থন চলাকালে অমৃত কলস আবির্ভূত হলে, দেবতাদের নির্দেশে ইন্দ্রপুত্র জয়ন্ত সেই কলস নিয়ে আকাশে উড়ে যান । কিন্তু অসুররা তাকে ধাওয়া করে, এবং এই ধাওয়া ও সংঘর্ষের সময় পৃথিবীর চারটি স্থানে প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, উজ্জয়িনী এবং নাসিকে অমৃতের বিন্দু পড়ে যায় । এই স্থানগুলোতেই কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয় । পৌরাণিক মতে, সূর্য, চন্দ্র, বৃহস্পতি এবং শনিদেবের বিশেষ সহযোগিতায় অমৃত কলসকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল ।
কুম্ভ মেলার সময় নির্ধারণে জ্যোতিষশাস্ত্রের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে । যখন নির্দিষ্ট গ্রহ ও রাশির অবস্থান একত্রে হয়, তখন সেই বছর এবং স্থানে কুম্ভ মেলার আয়োজন করা হয় । উদাহরণস্বরূপ —
- বৃহস্পতি যখন বৃষ রাশিতে ও সূর্য মকর রাশিতে থাকে, তখন প্রয়াগরাজে কুম্ভ মেলা হয় ।
- সূর্য মেষ রাশিতে এবং বৃহস্পতি কুম্ভ রাশিতে থাকলে হরিদ্বারে কুম্ভ হয় ।
- সূর্য ও বৃহস্পতি সিংহ রাশিতে অবস্থান করলে নাসিকে কুম্ভ অনুষ্ঠিত হয় ।
- বৃহস্পতি সিংহ রাশিতে এবং সূর্য মেষ রাশিতে থাকলে উজ্জয়িনীতে কুম্ভ মেলা হয় ।
২০২৫ সালের মহাকুম্ভ মেলা প্রয়াগরাজে আয়োজন করা হবে, যা শুরু হবে ১৩ জানুয়ারি, পৌষ পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রথম স্নান দিয়ে । মকর সংক্রান্তির শাহি স্নান হবে ১৪ জানুয়ারি এবং মৌনী অমাবস্যার শাহি স্নান হবে ২৯ জানুয়ারি । এছাড়া বসন্ত পঞ্চমী (৮ ফেব্রুয়ারি), মাঘ পূর্ণিমা (১২ ফেব্রুয়ারি), এবং মহাশিবরাত্রি (৮ মার্চ) উপলক্ষে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্নান হবে । মোট ২১টি শাহি স্নানের মাধ্যমে এই মহাকুম্ভ মেলা সমাপ্ত হবে ।
এই মেলা শুধু ধর্মীয় নয়, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও বিশাল গুরুত্ব বহন করে । লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী এবং সাধু-সন্ন্যাসী এই মেলায় অংশগ্রহণ করেন, যা একটি মহাজাগতিক মিলনমেলার চিত্র ফুটিয়ে তোলে ।