হিন্দু সমাজের মূল সমস্যা ও তার সমাধান প্রসঙ্গ
হিন্দু সমাজের মূল সমস্যা হচ্ছে সাম্যহীনতা । এ সাম্যহীনতা সমাজে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ব্রাহ্মণ হওয়ার নিয়মের পরিবর্তন ঘটিয়ে । স্বামী বিবেকানন্দ এ সমস্যা চিহ্নিত করেছিলেন । তিনি বেলুড়ে মঠ ও মিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন । তবে এ মহতী উদ্যোগে তিনি কারও সহযোগিতা পাননি । এমনকি তাঁর গুরুভ্রাতারাও তাঁকে সমর্থন জোগাননি । তাই উদ্যোগ নিয়েও তিনি সফল হতে পারেননি । এ কাজে পুরোপুরি সফল হয়েছেন ইসকনের প্রতিষ্ঠাতা আচার্য শ্রীল এ. সি. ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ দেশের বাইরে গিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করায়। তিনি বলতে থাকেন, 'ব্রাহ্মণ জন্মের ভিত্তিতে হবে না; ব্রাহ্মণ হওয়ার সিস্টেম হবে সর্বজনীন ও যোগ্যতা ভিত্তিক । ব্রাহ্মণ হওয়ার জন্মগত ধারা সঠিক নয় । একটি সমাজে সবার সমান সুযোগ ও সমান অধিকার না থাকলে সমাজটা কখনো মানবিক হয় না । অমানবিক সমাজ ধর্মীয় সমাজ নয়; তা বাজে ও বর্বর সমাজ ।' বহির্বিশ্বে তাঁর এ প্রচার ব্যাপক সমর্থন পায় এবং তাঁর দল ভারী হতে থাকে । তিনি তাঁর বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন গীতা থেকেই। উল্লেখ্য, ধর্মীয় সমাজ নিঃসন্দেহে সভ্য, সর্বজনীন ও মানবিক । ধর্মীয় সমাজে কোন জন্মজ ভেদবৈষম্য নেই ।
"যত মত তত পথ" তত্ত্বের অবতারণা করে টেকসই ধর্মীয় সমাজের পাঁচ স্তম্ভই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছেঃ
কী সেই পাঁচ স্তম্ভ?
এ পাঁচ স্তম্ভের প্রথম স্তম্ভ হচ্ছে 'সমতা', দ্বিতীয় স্তম্ভ হচ্ছে একেশ্বরবাদ, তৃতীয় স্তম্ভ হচ্ছে সর্বজনীন চরিত্র, চতুর্থ স্তম্ভ হচ্ছে প্রচারশীলতা তথা প্রচার-ব্যবস্থা, পঞ্চম স্তম্ভ হচ্ছে যোগ্য ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠার সুব্যবস্থা । এ পাঁচ স্তম্ভ একটি টেকসই ধর্মীয় সমাজে থাকা একান্ত দরকার । বর্তমান হিন্দু সমাজে এর একটিও নেই । প্রচলিত 'যত মত তত পথ' তত্ত্ব এর একটি স্তম্ভও ধারণ করে না । তবে ইসকন-ভিত্তিক সমাজে এ পাঁচটি স্তম্ভই আছে; তবে জাতিভেদ নেই । এজন্য ইসকন সকল প্রকার প্রতিকূল অবস্থার মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে চলেছে। ইসকনকে আসলে শক্তি জোগায় তার নৈতিক অবস্থান। প্রকৃত সত্য হলো, ইসকনে প্রচার আছে, প্রসার আছে। এ প্রসার সর্বত্র দৃশ্যমান ।
'বংশজ ব্রাহ্মন্যবাদ প্রশ্রয় পায়' - এমন অনুষ্ঠান আমাদের কাছে কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হবে নাঃ রামকৃষ্ণ মিশনের কুমারী পূজায় বংশজ ব্রাহ্মন্যবাদ প্রশ্রয় পায় । তাদের পূজায় কুমারী হিসেবে ব্যবহৃত হয় ব্রাহ্মণ বংশীয় কন্যা । এজন্য তা আমাদের কাছে সমর্থনযোগ্য নয়। স্বামী বিবেকানন্দের কুমারী পূজায় কোন সাম্প্রদায়িক ভাবনা প্রশ্রয় পায়নি । পূজার পুরোহিত ও কুমারী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বজনীন ভাবনার প্রতিফলন ঘটতে হবে । এ ক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট বংশ বা গোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিলে তা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। রামকৃষ্ণ মিশনের কুমারী পূজায় সর্বজনীন বা অসাম্প্রদায়িক ভাবনার কোন প্রতিফলন নেই । তাই আমাদের কাছে তা গ্রহণযোগ্য নয় । এমন অনুষ্ঠান যারাই করবে, তাদেরই ভাবমূর্তী ক্ষুন্ন হবে। কারণ সনাতন ধর্ম একটি সমত্ববাদপুষ্ট, সর্বজনীন ও মানবিক ধর্ম । সাম্যহীন সমাজে মানবতার কোন স্থান নেই । মানবতাহীন কোন সমাজ ধর্মীয় সমাজ বলে গন্য নয় ।