গীতা কি ? এর গুরুত্ব কি ?
ভগবদগীতা, যা গীতা নামেও পরিচিত, সনাতন ধর্মের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ । এটি সংস্কৃত মহাকাব্য মহাভারত-এর অংশ । এর প্রবক্তা স্বয়ং ঈশ্বর । গীতা ভগবানের মুখ থেকে নিসৃত হওয়া শুরু হয় কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ঠিক আগে । যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকা অর্জুন, যিনি ছিলেন পাণ্ডবপক্ষের সর্বোচ্চ শক্তিশালী যোদ্ধা, তিনি তখন নৈতিক সংকটে ভুগছিলেন ।
গীতার মূল বার্তা হলঃ
- কর্ম: ফলের আশা না করে, কর্তব্য পালন করা গুরুত্বপূর্ণ ।
- আত্মার অমরত্ব: শরীর নশ্বর হলেও আত্মা অমর ।
- ঈশ্বর: ঈশ্বর সর্বব্যাপী এবং সর্বশক্তিমান ।
- মোক্ষ: ঈশ্বরের সাথে মিলিত হওয়াই জীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্য ।
গীতা শুধুমাত্র হিন্দুধর্মের জন্যই নয়, বিশ্বের সকলের জন্যই একটি অনবদ্য রত্ন । এটি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন ধর্ম ও দর্শনের মানুষের দ্বারা পড়া ও গ্রহণ করা হয়েছে ।
গীতার ২০ টি অমৃত বাণী
কর্ম ও কর্মফল নিয়ে উক্তি
কর্মফলযোগং নির্বেশয়: কর্মের ফলের প্রতি আসক্তি ত্যাগ করো । (২.৪৭)
কর্মণো হ্যপি ফলশ্রেয়স: নিষ্কাম কর্মেরই ফল শুভ । (২.৪৭)
কর্মইশ্চ কর্মফলশ্চ: কর্মও আছে, কর্মের ফলও আছে । (৪.২১)
কর্ম বিনাশঃ শঙ্কিতা: কর্ম না করে শঙ্কিত হইও না । (২.৪৮)
স্বকর্মকর্মশ্চ: নিজের কর্ম নিষ্ঠার সাথে কর । (১৮.৪৫)
জ্ঞান ও আত্মজ্ঞান নিয়ে উক্তি
তত্ত্বমসি: তুমিই সেই (আত্মা) । (২.৭)
আত্মানং রথিনং রেহে: আত্মাকে রথী এবং দেহকে রথ মনে কর । (৩.৩)
নৈনং ছিন্দ্দেতি শস্ত্রাণি: শস্ত্র আত্মাকে কাটতে পারে না । (২.২৩)
অজো নিত্যো অক্ষর: আত্মা অজন্মা, নিত্য, অক্ষয় । (২.২৭)
বিদ্যাবিনাশিনঃ শত্রুঃ: জ্ঞানই শত্রুর ধ্বংসকারী । (৬.৪)
ঈশ্বর ও ঈশ্বরভক্তি উক্তি
মৎপ্রণী পালিতঃ সেবকঃ: আমার ভক্ত সেবক । (৯.২৩)
মৎকর্মকৃৎ মৎপরায়ণ: আমার কর্ম করে, আমার প্রতি নিবেদিত হও । (৯.২৭)
মমাপ্যায়য়িতোহম্: তোমাদের আমার দ্বারা পূর্ণ করা হয় । (৪.৩৩)
মৎস্মরণে পরমো মুদঃ: আমার স্মরণেই কেবল পরম আনন্দ লাভ হতে পারে । (৬.২২)
মৎপ্রাপ্য সর্বকামান্: আমাকে পেলেই সকল কামনা পূর্ণ হয় । (৭.১)
জীবন ও নীতিবোধ উক্তি
ধর্মো যুদ্ধে চাপলে যুদ্ধং: যখন ধর্ম বিপন্ন হয়, তখন যুদ্ধই কর্তব্য । (৪.৭৮)
উচিতং কর্ম কর্মফলং নোপেক্ষে: কর্তব্য পালন কর, কর্মের ফলের প্রতি আসক্ত হইও না । (২.৪৭)
সমোহঃ সর্বসমঃ: সকলের প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি রাখো । (১৮.২৯)
সুখদুঃখসমঃ: সুখ-দুঃখ সমভাবে গ্রহণ করো । (১২.১৯)
ত্রিদোষং দোষেণ চোপশম্যেত: ত্রিদোষ ত্রিদোষ দ্বারাই প্রশমিত হয় । (১৮.৫৬)
গীতা সমগ্র মানবজাতির জন্য অমূল্য সম্পদ । জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জ্ঞান, নীতিবোধ এবং আধ্যাত্মিকতার শিক্ষা এই বাণীগুলিতে রয়েছে । গীতার আরও অনেক মূল্যবান বাণী রয়েছে । আপনাদের যদি কোন বিশেষ বিষয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকে, তাহলে আমাদের জানাতে পারেন ।