রাবণ ও সংগীতের প্রতি তার অনুরাগ
বেদ শাস্ত্রে পারদর্শী: রাবণ বেদ শাস্ত্রের একজন পণ্ডিত ছিলেন এবং বেদের সকল শাখার জ্ঞান লাভ করেছিলেন তিনি । বেদের অন্তর্ভুক্ত ছিল সঙ্গীত শাস্ত্রও । তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতেও যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন ।
তিনি বীণা বাজানোতে অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন এবং "রাবণ বেণী" ও "রুদ্র বীণা" নামে দুইটি বীণাও তৈরি করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয় ।
রামায়ণে বর্ণিত আছে যে, রাবণ প্রায়শই মাতা সীতাকে বীণা বাজিয়ে গান শুনাতেন ।
রাবণের উপর সংগীতের প্রভাব
সেসময় রাবণের সংগীত রচনা এবং বাদ্যযন্ত্র বাজানোর দক্ষতা তাকে একজন বিখ্যাত শিল্পী করে তুলেছিল । তার সংগীত লঙ্কার রাজদরবারে এবং সমগ্র রাক্ষস জাতির মধ্যে অনেক জনপ্রিয় ছিল । রাবণের বিশ্বাস ছিল যে, সংগীতের মাধ্যমে ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা যায় এবং তিনি নিয়মিত মহাদেবের পূজা করার সময় বীণা বাজাতেন ।
সঙ্গীত রচয়িতা রাবণ
রাবণ ছিলেন ভগবান শিবের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত । তিনি দীর্ঘকাল ধরে হিমালয়ে তপস্যা করেছিলেন এবং ভগবান শিবের বর লাভ করেছিলেন ।
দশানন রাবণের সবচেয়ে বিখ্যাত রচনা হল "শিব তাণ্ডব স্তোত্রম" । রাবণ যখন মহাদেবের ক্রোধের সম্মুখীন হন, তখন তিনি এই স্তোত্র রচনা করে ভগবান শিবকে প্রশান্ত করেছিলেন ।এটিতে সুরও তিনিই করেছিলেন । এই স্তোত্রটি আজও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ।
অন্যান্য রচনা
রাবণ আরও অনেক সঙ্গীত রচনা করেছিলেন বলে ধারণা করা হয় । তবে, সেগুলো "শিব তাণ্ডব স্তোত্রের" এর মতো এতো বিখ্যাত হয়নি ।
সংগীতের প্রতি রাবণের অনুরাগ
রাবণের জন্য সঙ্গীত কেবল জ্ঞানের শাখাই ছিল না, বরং বিনোদনের মাধ্যমও ছিল । তিনি বীণা বাজাতে পারতেন এবং গান গাইতে পারতেন । কথিত আছে ভারতে রুদ্রবীণার প্রচলন করেছিলেন ্দশানন রাবণ । রাবণের রাজসভায় নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশিত হত । ত্রেতা যুগের বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীরা রাবণের রাজসভায় গান পরিবেশনা করতেন । রাবণ যুদ্ধক্ষেত্রেও সঙ্গীতের ব্যবহার করতেন । যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিকদের মনোবল বৃদ্ধি করার জন্য যুদ্ধের গান গাওয়া হত ।
যদিও রাবণকে আমাদের হিন্দুশাস্ত্রে একজন নেগেটিভ চরিত্র হিসেবে চিত্রিত করা হয়, তবুও তার সংগীতের প্রতি অনুরাগ ও দক্ষতা অস্বীকার করা যায় না । তিনি ছিলেন একজন প্রতিভাবান সঙ্গীতজ্ঞ এবং সঙ্গীত রচয়িতা, যার সংগীত সৃষ্টি আজও আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায় ।