বৃক্ষরোপন ও হিন্দুধর্ম

0
বৃক্ষরোপন ও হিন্দুধর্ম

গাছ, পরিবেশ এবং সনাতন ধর্ম

গরমের চাপে লোকজন এখন বলছে- গাছ লাগান জীবন বাঁচান, যে কথা মুনি ঋষিরা অন্তত ৮/১০ হাজার বছর আগে বলে গেছে গাছ কাটতে নিষেধ করে, বিস্তারিত জানতে হলে পড়ুন নিচের প্রবন্ধটি-

সনাতন ধর্মে ৪৯ প্রকার পাপের কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে ৩০ নং পাপ হলো- ‘ইন্ধনার্থে অশুষ্ক গাছপালার ছেদন’ অর্থাৎ জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করার জন্য জীবিত গাছপালা কাটা ।

একটু ভাবুন হিন্দু শাস্ত্র কত উচ্চ মার্গের জীবন দর্শন, ঠেলায় পড়ে যে বিষয়টি বর্তমানের লোকজনের মনে পড়েছে, সেই একই বিষয়ে ৮/১০ হাজার বছর আগের মুনি ঋষিরা মানুষকে সতর্ক করেছে অশুষ্ক বা জীবিত গাছ কাটাকে পাপ হিসেবে ঘোষণা করে ।

একারণেই হিন্দুরা, দুর্গা পূজা সময়, সমগ্র গাছপালার প্রতীক হিসেবে ‘নবপত্রিকা’ নামে গাছপালার পূজা করে এবং সারাবছরের প্রতিদিন করে তুলসী গাছের পূজা । এখানে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন, গাছপালা যদি না ই কাটি তাহলে ঘর-বাড়ি ও আসবাব পত্রের জন্য কাঠ এবং জ্বালানীর জন্য খড়ি পাবো কোথায় ? 

খেয়াল করবেন, এখানে বলা হয়েছে, ‘ইন্ধনার্থে অশুষ্ক গাছপালার ছেদন’ অর্থাৎ শুধু জ্বালানীর জন্য অশুষ্ক অর্থাৎ মারা যায় নি এমন গাছপালা না কাটার কথা । এর মানে হলো প্রয়োজন হলে ঘর-বাড়ি এবং আসবাব পত্রের জন্য জীবিত গাছ কাটা যাবে, কিন্তু কোনো অবস্থাতেই জ্বালানীর জন্য জীবিত গাছ কাটা যাবে না ।

তাহলেও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে যে, জ্বালানীর জন্য কাঠ পাবো কোথায় ? এর একটা সমাধান হচ্ছে, মৃত গাছকে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যাবে । আর অন্য সমাধান রয়েছে গবাদী পশু পালনের মধ্যে । কোনো বাড়িতে যদি ২/৩ টি গরু পালন করা হয়, তাহলে ৪/৫ জন সদস্যের একটি পরিবারের প্রয়োজনীয় জ্বালানী, গরু থেকে প্রাপ্ত গোবরের ঘুঁটে থেকেই হোক বা বায়োগ্যাসের প্ল্যান্ট থেকেই হোক, আনায়াসেই পাওয়া সম্ভব, তাহলেই আর জ্বালানীর জন্য গাছপালা কাটার প্রয়োজনই পড়বে না । এজন্যই হিন্দু পরিবারে গরু পালন করার এত গুরুত্ব; কেননা, কোনো বাড়িতে গরু পালন মানেই একসঙ্গে অনেক সমস্যার সমাধান ।

বর্তমান সময়ে আমরা ব্যাপকভাবে বুঝতে পারছি যে গাছপালা না থাকলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে, পৃথিবী মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে, এগুলো দূর ভবিষ্যতে ঘটলেও বর্তমান সময়ে সূর্যের অত্যধিক তাপে ঘর থেকে যখন বের হওয়া যাচ্ছে না, তখন মানুষ হাড় হাড়ে বুঝতে পারছে যে গাছ কাটা কি ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর ব্যাপার, সেজন্য অনেক আগে থেকেই পরিবেশবিদরা রাতদিন চিল্লাপাল্লা করছে । “বেশি করে গাছ লাগান, পরিবেশ বাঁচান ” এবং “প্রয়োজনের তাগিদে একটি গাছ কাটলে সেই ক্ষতি পূরণে পাঁচটি গাছ লাগান”- ইত্যাদি বলে । কারণ, এই গাছ না থাকাকে বা প্রয়োজনের তুলনায় কম গাছ থাকাকে আমরা মাত্র গত শতাব্দীর শেষ ভাগে পরিবেশ তথা পৃথিবীর জন্য একটি মারাত্মক সমস্যা হিসেবে বুঝতে শিখেছি, কিন্তু আমাদের মুনি ঋষিরা সেই ৮/১০ হাজার বছর আগে এই সমস্যাকে উপলব্ধি করেছিলেন যে, গাছপালা না থাকলে পৃথিবীতে কোনো প্রাণী টিকতে পারবে না, যেটা আমরা বর্তমানে উপলব্ধি করতে পারছি অত্যন্ত গরমে সিদ্ধ হয়ে, গরমের অবস্থা এমন চরমে উঠে গেছে যে উপরের ঐসব নিরীহ শ্লোগান দিয়ে আর বাস্তব পরিস্থিতিকে বোঝানো যাচ্ছে না । যে কারণে এখন ডাইরেক্ট বলতে হচ্ছে যে- “গাছ লাগান, জীবন বাঁচান” । গাছের এই গুরুত্ব বুঝতে পেরেই মুনি ঋষিরা জীবিত গাছপালা কাটাকে পাপ হিসেবে হিন্দু শাস্ত্রে উল্লেখ করে গেছেন, যাতে মানুষ ভালোভাবে পৃথিবীতে বাঁচতে পারে, সূর্যের তাপ থেকে পৃথিবী রক্ষা পেতে পারে ।

দূরদর্শিতা কাকে বলে, সেটা একবার ভাবুন, আর শ্রদ্ধায় আপনার মাথা হিন্দু মুনি-ঋষিদের নিকট নত করুন; কারণ, এটা আপনার কর্তব্য এবং আপনার শ্রদ্ধা হিন্দু মুনি-ঋষিদের প্রাপ্য । আর এই কারণেই হিন্দুধর্মকে উচ্চ মার্গের জীবন দর্শন বলেছি ।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
Post a Comment (0)
To Top