বরাহ অবতার - পৃথিবীকে প্লাবনের থেকে উদ্ধার

0

বরাহ অবতার - পৃথিবীকে প্লাবনের থেকে উদ্ধার

বরাহ অবতার এর কাহিনী

হিন্দু পুরাণে বিষ্ণুর দশ অবতারের তৃতীয় অবতার বরাহ অবতার । সত্যযুগে ভগবান শ্রী হরি বিষ্ণু বরাহ অর্থাৎ শূকরের রূপে প্রকট হন । পুরাণ মতে, তিনি হিরণ্যাক্ষ নামক রাক্ষসের হাত থেকে ভূদেবী পৃথিবীকে উদ্ধার করেন । বরাহ অবতারের চারটি হাত; চার হাতে শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম; এবং বরাহদন্তে ধরা থাকে পৃথিবী । বরাহ অবতার প্রলয়ের পর পৃথিবীর নবজন্ম ও নতুন কল্পপ্রতিষ্ঠার প্রতীক ।

বরাহ অবতারের উপাখ্যান

দেবতারা তাদের আপন ভাই অসুরদের হত্যা করেছিল অমৃতপান করে । তাই মাতা দিতি অত্যন্তকষ্ট পান । তিনি ক্রন্দনরত অবস্থায় তার পতি কশ্যপ মুনির কাছে যান । কশ্যপমুনি তখন ধ্যানরত ছিলেন ।

মাতা দিতি কশ্যপ মুনির কাছে বর চান; তার যেন পূনরায় এমন পুত্র হয় যারা ইন্দ্রকে পরাজিত করে আপন ভাইদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে পারে । মুনি কশ্যপের বরে মাতা দিতির দুইটি যমজ পুত্র হয়। তারা হলেন মহা-পরাক্রমশালী হিরণ্যাক্ষ আর হিরণ্যকশিপু । বাল্যকাল থেকেই তারা যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে উঠে । তারা নিরীহ প্রাণীদের নির্দয়ভাবে বধ করত । তারা দুই ভাই ইন্দ্রকে পরাজিত করার ইচ্ছা পোষণ করত । আর দেবতাদের শত্রু মনে করত। অসুর গুরু শুক্রাচার্যের পরামর্শে হিরণ্যাক্ষ ভগবান ব্রহ্মার ঘোরতর তপস্যা শুরু করেন । কঠোর তপস্যার পর ভগবান ব্রহ্মা তাকে ইচ্ছানুসারে বর চাইতে বললেন ।

হিরণ্যাক্ষ বর চাইলেন; কোন রক্ষ-যক্ষ, দেব-দানব, মনুষ্য-কিন্নর, পশু -পাখি (তিনি বিভিন্ন পশুর নাম বললেন) কর্তৃক যেন তার মৃত্যু না হয় । ব্রহ্মা তাকে তার ইচ্ছানুসার বর দান করলেন। বরদান পেয়ে সে অহংকারী ও অত্যাচারী হয়ে ওঠে । সে স্বর্গরাজ্যে ইন্দ্রকে যুদ্ধে পরাজিত করে স্বর্গরাজ্য তথা ত্রিলোক দখল করে নেয়। হিরণ্যাক্ষ পৃথিবীর দেবী বসুমতীকে ও সমুদ্রের অভ্যন্তরে আটকে রাখেন ।

বিতাড়িত দেবগণ ভগবান ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলে ব্রহ্মা ভগবান বিষ্ণুর কাছে আকুল প্রার্থনা করেন যেন তিনি এই সংকট মোচন করেন । হিরণ্যাক্ষ বর দান লাভের সময় এক পশুর নাম বলতে ভুলে গিয়েছিল আর তা হল বরাহ বা শুকর । পশুদের মধ্যে বরাহ বেশ শক্তিশালী । ভগবান বিষ্ণু ব্রহ্মার আহ্বানে বরাহ বা শুকরের রূপ ধারণ করেন । আর এটাই ভগবান বিষ্ণুর বরাহ অবতার ।

বরাহের মুখের সামনের দিকে দুটি বড় দাঁত থাকে । ভগবান বরাহ ঐ দাঁত দিয়ে ভূমি দেবীকে ধারণ করে জলের উপরে তুলে ধরেন । পৃথিবী রক্ষা পায় প্রলয়ের হাত থেকে । তারপর হিরণ্যাক্ষ ভগবানের সাথে গদাযুদ্ধ আরম্ভ করে আর পরাজিত হয়। যুদ্ধের এক পর্যায়ে ভগবান বরাহ তার সামনের তীক্ষ্ণ দাঁত দিয়ে আঘাত করে হিরণ্যাক্ষকে বধ করেন । ইন্দ্রদেব পুনরায় স্বর্গরাজ্যের রাজা হল। চারদিকে ভগবান বিষ্ণুর জয়গান ধ্বনিত হলেন । ভগবান বিষ্ণু ধরিত্রীকে পুনরায় রক্ষা করল বরাহ রূপ ধারণ করে 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
Post a Comment (0)
To Top