হিন্দুরা কেন সৃষ্টিকর্তাকে ভগবান বলে ?

1
হিন্দুরা কেন সৃষ্টিকর্তাকে ভগবান বলে ?

হিন্দুরা কেন সৃষ্টিকর্তাকে ভগবান বলে ?

আমরা জানি, পঞ্চভূত দ্বারা মানুষের দেহ তৈরি । এই পঞ্চভূত বা পাঁচটি পদার্থ হলো- ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম। এদের মধ্যে ক্ষিতি মানে মাটি, অপ মানে জল, তেজ মানে আগুন, মরুৎ মানে বাতাস এবং ব্যোম মানে আকাশ ।

মানবদেহের যে তরল অংশ সেটা জল, মানবদেহের যে উষ্ণতা সেটা আগুন, মানবদেহের শ্বাস প্রশ্বাসের যে ব্যাপার সেটা বাতাস, এগুলোর বাইরে মানবদেহের অবশিষ্টাংশ হলো মাটি । কিন্তু মানবদেহে ব্যোম বা আকাশ কোথায় ? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে অনেকেই ধুতি খুলে যাবার মতো অবস্থা হয়। বাস্তবে মানবদেহে- আকাশ বলতে কিছু নেই, একটি মানবদেহ পৃথিবীতে অবস্থানকালীন প্রকৃতির যে অংশটুকু দখল করে থাকে অর্থাৎ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যে অংশটুকুতে তার অস্তিত্ব বিরাজিত, সে অংশটুকুই ঐ ব্যক্তির আকাশ । যেমন- একটি টেবিলের উপর একটি বই রাখলে ঐ বইটি টেবিলের উপরের যে অংশটুকুকে ত্রিমাত্রিকভাবে অর্থাৎ দৈর্ঘ, প্রস্থ ও উচ্চতার হিসেবে দখল করে, সেই জায়গাটিই ঐ বইয়ের আকাশ ।

জল, মাটি, বাতাস, আগুন দ্বারা কোনো বস্তু তৈরি হলে সেটি অবশ্যই প্রকৃতিতে কোনো না কোনো স্থান দখল করবে । কোনো বস্তুর জন্য প্রকৃতির এই যে স্থান সেটাই ঐ বস্তুর আকাশ। কারণ প্রকৃতির কোনো স্থান দখল ছাড়া কোনো বস্তু কখনো দৃশ্যমান বা অনুভবের মধ্যে আসবে না । আশা করছি- মানবদেহে আকাশ কিভাবে অবস্থিত, সেটা আমার পাঠক বন্ধুদেরকে বোঝাতে পেরেছি ।

এখন প্রশ্ন হলো এই পঞ্চভূতের সাথে ভগবানের সম্পর্ক আসলে কী ? কেনো আমি ভগবান বোঝাতে গিয়ে পঞ্চভূতের অবতারণা করলাম ?

“ভগবান” এই শব্দটিতে আছে- ভ গ ব আ ন- এই পাঁচটি বর্ণ । ‘ভ’ কে গ্রহণ করা হয়েছে ভূমি বা ক্ষিতি বা মাটি থেকে; ‘গ’ কে গ্রহন করা হয়েছে গগন বা আকাশ বা ব্যোম থেকে; ‘ব’ কে গ্রহন করা হয়েছে বায়ু থেকে; ‘আ’ কে গ্রহণ করা হয়েছে আগ্নেয় বা অগ্নি বা তেজ থেকে; আর ‘ন’ কে গ্রহন করা হয়েছে নীর বা জল বা অপ থেকে ।

যে পঞ্চভূত দ্বারা পৃথিবীর সকল প্রাণী বা উদ্ভিদ বা বস্তুর উৎপত্তি, সেই পঞ্চভূতের প্রতিটি সদস্যের নামের প্রথম বর্ণকে একত্রিত করে তৈরি করা হয়েছে ভগবান শব্দের এবং যেহেতু ঐ পঞ্চভূত দ্বারাই পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী তথা মানবের উৎপত্তি, সেহেতু বাস্তবে ঐ পঞ্চভূতই আসলে মানুষের সৃষ্টিকর্তা, যে কারণে সনাতনীরা সৃষ্টিকর্তাকে সাধারণ অর্থে ভগবান বলে সম্বোধন করে বা ডাকে । একারণেই সনাতন ধর্মে ভগবান একাধিক এবং ইনারা হলেন বিভিন্ন শক্তিসম্পন্ন দেব-দেবীগণ । কিন্তু এই দেব-দেবীগণ যার শক্তি বা নির্দেশে সৃষ্টিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকেন তিনি হলেন ঈশ্বর, যিনি এক ।

একারণেই ঈশ্বর এক, কিন্তু ভগবান একাধিক । আবার ভগবানগণ যেহেতু মাত্র- যশ, বীর্য, ঐশ্বর্য, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্য এই ছয়টি গুনের অধিকারী, কিন্তু ঈশ্বর সকল গুনের অধিকারী, একারণে ঈশ্বরকে- ঈশ্বর এবং ভগবান দুটো নামেই ডাকা যায়, যেহেতু সকল গুনের মধ্যে ভগবানোচিত ছয়টি গুন থাকেই, কিন্তু ভগবানরা শুধুই ভগবান, তাদেরকে ঈশ্বর বলা যায় না, যেহেতু তাদের গুন ছয়টির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ।

তাই সনাতনীরা যখন তাদের সৃষ্টিকর্তাকে ভগবান বলে সম্বোধন করে, সেটা একই সাথে শুধু দেব-দেবীগণকেই বোঝায় না, বোঝায় ঈশ্বরকেও ।

Post a Comment

1 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.
Post a Comment
To Top