হর হর মহাদেব মানে কী ?
ধ্বংসের দেবতা মহাদেব শিবকে, তেজঃবীর্য অর্থাৎ জোশের সাথে স্মরণ করতে সবাই বলে থাকে “হর হর মহাদেব”, কিন্তু খুব কম মানুষই আছে, যারা এর প্রকৃত অর্থ জানে বা প্রকৃত অর্থকে উপলব্ধি করতে পারে বা পেরেছে ।
বিশেষ্য পদ হিসেবে ‘হর’ শব্দের অর্থ- সংহার কর্তা, যিনি শিব বা রুদ্র; অর্থাৎ ‘হর’ মানেও শিব আবার মহাদেব মানেও শিব । এই সূত্রে ‘হর হর মহাদেব’ মানে ‘শিব শিব শিব’ বা তিনবার একই সাথে শিবকে স্মরণ করা ।
কিন্তু এগুলোর বাইরেও ‘হর’ শব্দের আরেকটি গূঢ় অর্থ আছে, যা প্রমান করে সকলের মধ্যেই ঈশ্বর বিরাজমান ।
বাংলায়- “যত জীব, তত শিব” বলে একটা কথা আছে এবং এই কথা দিয়ে এটা বোঝায় যে, প্রত্যেক প্রাণীর মধ্যেই শিব বাস করেন এবং এটা দিয়ে প্রকৃতিতে সৃষ্ট প্রতিটি প্রাণীকে শ্রদ্ধা করতে বা ভালোবাসতে শিক্ষা দেয় সনাতন মানব ধর্ম বা হিন্দুধর্ম ।
যা হোক, ফিরে যাই মূল আলোচনায়, যত জীব, তত শিবেরই আরেকটি রূপ হলো “হর হর মহাদেব”, আর এটা বুঝতে হলে আপনাকে ঢুকতে হবে বাংলা ব্যাকরণে ।
“রোজ রোজ” মানে প্রতিদিন, আর ‘রোজ রোজ’ এর আরেকটি রূপ হলো ‘হর রোজ’, তাই হর রোজ এর মানেও প্রতিদিন। তাহলে এখানে ‘হর’ এর মানে দাঁড়াচ্ছে প্রতি বা প্রত্যেক বা প্রতিজন । এখন ‘হর’ এর মানে প্রতি হিসেবে ধরে ‘হর হর মহাদেব’ এর অর্থ হলো ‘জনে জনে শিব’ বা প্রতিজনই শিব, এখন এটাকে উপরে বলা ‘যত জীব তত শিব’ এর সাথে মিলিয়ে দেখুন, দুটো বিষয় একই অর্থ প্রকাশ করে কি না ?
‘হর হর মহাদেব’ এবং ‘যত জীব তত শিব’ যে একই অর্থ প্রকাশ করে, আশা করছি সবার কাছে সেটা ক্লিয়ার হয়েছে। কিন্তু এই হর হর মহাদেব শব্দগুচ্ছের মধ্যে অন্য কী অর্থ বা কী শিক্ষা লুকিয়ে আছে আমাদের জন্য ?
সবাই জানেন যে, শিব হলো ধ্বংসের দেবতা । শিব তাকেই ধ্বংস করে, যে বা যারা সমাজের জন্য অশুভ, ভয়ংকর বা ক্ষতিকর । শিব কোনো শুভ শক্তিকে ধ্বংস করে না। হর হর মহাদেব শব্দগুচ্ছটি আমাদেরকে এই বার্তা বা এই শিক্ষাই দেয় যে, অন্যায় বা অশুভকে দমন করার জন্য আমাদের প্রত্যেককে হতে হবে শিবের মতো সংহার কর্তা, দমন করতে হবে দুষ্কৃতকারীদের এবং রক্ষা করতে হবে সাধুদের ।
প্রকৃতপক্ষে ‘হর হর মহাদেব’ বাক্যটি আমাদেরকে এই শিক্ষাই দেয় যে, অন্যায় ও অশুভ শক্তিকে দমনে তোমরা প্রত্যেকে হয়ে উঠো এক একজন শিব এবং বিনাশ করো সকল অত্যাচারীকে ।
আমরা অনেকেই বলি হর হর মহাদেব, কিন্তু ক’জন এই প্রকৃত সত্যকে হৃদয়ে লালন করি বা সেই মতো কাজ করি ?
মহাদেবের আদর্শ এবং তার ত্রিশুলই হিন্দু সমাজকে রক্ষা করার একমাত্র পথ । যেদিন প্রতিটি হিন্দুর হাতে থাকবে একটি করে ত্রিশুল, সেই দিন হবে না কোনো হিন্দু নারী ধর্ষণ, হবে না কোনো হিন্দুর ভিটে মাটি দখল, কোনো মুসলমান কোনো হিন্দু মেয়েকে লাভ জিহাদের কবলে ফেলেও দখল করতে পারবে না, কোনো হিন্দুকে ত্যাগ করতে হবে না তার জন্মভূমি ।
তাই আমি সকল হিন্দুকে অনুরোধ করবো, মুখে ‘হর হর মহাদেব’ বলার সাথে সাথে অন্তরে ধারণ করুন এই বাক্যের মর্ম এবং হয় উঠুন এক একজন শিব । তাহলে আপনার হাতেই রক্ষা পাবে হিন্দুধর্ম এবং হিন্দু সমাজ ।