পরশুরাম কত বছর জীবিত ছিলেন ?
রামায়ণ এবং মহাভারতে উল্লিখিত পরশুরাম একই ব্যক্তি । পুরাণে ১০ জন চিরজীবী ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে, তাদের মধ্য পরশুরাম একজন । পরশুরাম মহেন্দ্র পর্বত নামক একটি পর্বতে বাস করতেন । রামের কাছে ধনুক বিষয়ক এক প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয়ে পরশুরাম যেমন মহেন্দ্রপর্পবতে গমন করেন, একই ভাবে মহাভারতে- ব্রাহ্মণের পরিচয় দিয়ে শিক্ষা গ্রহন করায়, সেই বিষয়টা জানতে পেরে, পরশুরাম, কর্ণকে অভিশাপ দিয়েও মহেন্দ্রপর্বতের দিকে চলে যান, মহাভারত তথা সনাতন ধর্মীয় কাহিনীতে এটাই হলো পরশুরামের শেষ উপস্থিতি ।
এছাড়াও- পিতার আদেশে, পরশুরাম, তার মাকে হত্যা করেছিলেন, এজন্য পিতা তাকে বর দিতে চাইলে, পরশুরাম এই পাঁচটি বর চান-
১. মাতা যেন জীবিত হয় ।
২. তাঁর হত্যার ঘটনা যেন তাঁর স্মৃতিতে না থাকে ।
৩. যুদ্ধে যেন তিনি অজেয় হন ।
৪. মাতৃহত্যার পাপ থেকে তিনি যেন মুক্তি পান এবং
৫. সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত যেন তিনি জীবিত থাকেন ।
বাস্তবতার নিরীখে যদি তাঁর চিরজীবীর থিয়োরি বাদ দিই, তবু তিনি পিতার আশীর্বাদে দীর্ঘজীবী এবং এই সূত্রে তার রামায়ণ ও মহাভারতের যুগে জীবিত থাকা অসম্ভব কিছু নয়, যেহেতু - ভারতের হায়দরাবাদে অবস্থিত ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্টিফিক রিসার্চ অন ভেদাজ বা সংক্ষেপে আইসার্ভ নামের গবেষণা সংস্থার গবেষকরা প্ল্যানেটোরিয়াম সফ্টওয়্যারের সাহায্যে গবেষণা চালিয়ে জানিয়েছেন যে, ৫১১৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ১০ জানুয়ারি বেলা ১২টা থেকে ১টার মধ্যে অযোধ্যায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন রামচন্দ্র- সেহেতু রামচন্দ্রের সময় বর্তমান থেকে প্রায় ৭১০০ বছর আগে, আর মহাভারতের সময় মোটামুটি ৫৩০০ বছর আগে; তাহলে এই দুই সময়ের পার্থক্য মোটামুটি ১৮০০ বছর, যেটা পরশুরামের পিতার আশীর্বাদ অনুযায়ী সুদীর্ঘকাল জীবিত থাকাকে সাপোর্ট করে । কিন্তু অন্ধবিশ্বাস দ্বারা চালিত না হয়ে এখানে একটি বিষয় যুক্তির সাথে বিচার করতে হবে যে- সনাতন ধর্মে যে চারটা যুগের কথা বলা হয় এবং তাদের যে সময়সীমার কথা বলা হয়, এটা আসলে অবাস্তব, এই হিসাবের কথা বলা আছে মনুসংহিতায়, যে মনুসংহিতা নানা উল্টা পাল্টা এবং একই বিষয়ে আলাদা আলাদা তথ্যের জন্য বিখ্যাত, তাই সনাতন ধর্মের যুগবিভাগের সময়ের হিসাবকে প্রামাণ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায় না । তাই পরশুরাম যে সুদীর্ঘকাল জীবিত ছিলেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই এবং এটা কমপক্ষে ২ হাজার বছর ।