জীবাত্মা ও পরমাত্মা কি ? এদের সম্পর্ক কি ?
শ্রীমদ্ভাগবতের তৃতীয় স্কন্ধে বলা হয়েছে যে, একটি বিশেষ দেহ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে দৈবের নির্দেশে একটি জীবাত্মাকে একজন পুরুষের বীর্যে স্হাপন করা হয় এবং তাকে এক বিশেষ নারীর গর্ভে প্রক্ষিপ্ত করা হয় । নিজ পছন্দ অনুযায়ী এই জীবাত্মা তার মন, বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয়গুলি ব্যবহার করে এবং এভাবে একটি বিশেষ দেহের বিকাশ ঘটিয়ে সে তার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ে । বিভিন্ন পরিবেশ ও অবস্থা অনুযায়ী এই রকমভাবে দেবতা, মানুষ বা পশু আদি বিভিন্ন প্রজাতির দেহে অবস্থিত হয় ।
বৈদিক শাস্ত্রে উল্লেখ আছে যে, জীবকুল বিভিন্ন প্রজাতির দেহপাশে আবদ্ধ হয়ে যায়, আর তারা হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবানের অংশ বিশেষ । মায়াবাদীরা প্রকৃত বন্ধুরূপে উপবিষ্ট পরমাত্মাকে জীব মনে করে ভুল করে । হৃদয়ে স্হিত ভগবানের রূপ পরমাত্মা ও জীবাত্মা উভয়ই জীবদেহে অবস্হিত হওয়ায়, কখনো কখনো এই দুজনের মধ্যে প্রভেদ নির্নয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় ।
স্বতন্ত্র জীব ও পরমাত্মার মধ্যে যে প্রভেদ রয়েছে বরাহ পুরানে তা এভাবে বিশ্লেষন করা হয়েছে — পরমেশ্বর ভগবানের দুরকম অংশ রয়েছে : জীবাত্মাকে বিভিন্নাংশ বলে ; আর পরমাত্মা বা পরমেশ্বর ভগবানের অংশ প্রকাশকে স্বাংশ বলে । এই স্বাংশ স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবানের মতই বীর্যশালী । পরমেশ্বর ভগবানের শক্তি ও ভগবানের অংশ প্রকাশ পরমাত্মার শক্তির মধ্যে সামান্যতমও পার্থক্য নেই, কিন্তু বিভিন্নাংশ পরমেশ্বর ভগবানের শক্তির অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশের অধিকারি ।
নারায়ণ-পঞ্চরাত্রে বর্ননা করা হয়েছে যে,
পরমেশ্বর ভগবানের তটস্হা শক্তি-সম্পন্ন জীবসমূহ নিঃসন্দেহে স্বয়ং ভগবানের মত একই চিন্ময় গুণ সম্পন্ন, কিন্তু তাদের জড় গুণের সঙ্গে সংযুক্ত হবার প্রবনতা রয়েছে । যেহেতু তার জড় গুণের অধীনে নিয়ন্ত্রিত হবার প্রবণতা রয়েছে, তাই অনুসদৃশ জীবন সত্তাকে 'জীব' বলা হয় ।
এক বিশেষ জীবাত্মার দেহে অধিষ্ঠিত পরমাত্মা পরমেশ্বর ভগবানের অংশ প্রকাশ হলেও তিনি স্বতন্ত্র জীবের দ্বারা উপাস্য। নিজ প্রচেষ্টায় জীবাত্মা কখনো জড় বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারে না । এজন্য তাকে অন্তর্যামী পরমাত্মা অথবা পরমেশ্বর ভগবানের চরণকমলের প্রীতিমূলক সেবা করতে হবে যাতে আবার দিব্য আনন্দময় স্বরূপে অধিষ্ঠিত হতে পারে ।