নারীদের ক্ষেত্রে শ্রাদ্ধ, তর্পণ বা পিন্ডদান
হিন্দু ধর্মে কারও মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ বা তর্পণ করা আবশ্যক । কথিত আছে যে শ্রাদ্ধ কর্ম, তর্পণ, পিন্ডদান না করা পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির আত্মা শান্তি পায় না।
তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি বিশ্বাস রয়েছে যে শ্রাদ্ধ কেবল পুরুষরাই করতে পারে । এটা সম্পূর্ণ সঠিক নয় । গরুড় পুরাণে বলা হয়েছে, নারীরা শ্রাদ্ধকর্ম, তর্পণ বা পিণ্ডদান করতে পারে । এমন কিছু পরিস্থিতি রয়েছে যেখানে পিন্ডদান বা শ্রাদ্ধ নারীরা করতে পারে ।
গরুড় পুরাণে মোট ২৭১টি অধ্যায় ও ১৮ হাজার শ্লোক রয়েছে । এর ১১, ১২, ১৩ এবং ১৪ নম্বর শ্লোকে উল্লেখ করা হয়েছে যে হিন্দু ধর্মে শ্রাদ্ধের গুরুত্ব কী, কে এবং কোন পরিস্থিতিতে শ্রাদ্ধ করতে পারেন ।
বড় বা পরবর্তী কনিষ্ঠ পুত্র অথবা কন্যার অনুপস্থিতিতে স্ত্রী ও পুত্রবধূ শ্রাদ্ধ করতে পারে । কিন্তু স্ত্রী জীবিত না থাকলে ভাই, ভাইপো, দৌহিত্র, ভাগ্নেও শ্রাদ্ধের কাজ করতে পারে। যদি এরাও কেউ না থাকে তাহলে শিষ্য, বন্ধু বা আত্মীয়রাও শ্রাদ্ধ করতে পারেন ।
গরুড় পুরাণ থেকে তাহলে স্পষ্ট যে মহিলাদেরও শ্রাদ্ধ বা পিণ্ডদান করার অধিকার রয়েছে। তবে এর জন্য কিছু বিশেষ শর্তও দেওয়া হয়েছে । তবে তর্পণ বা শ্রাদ্ধের ক্ষেত্রে প্রথম পুরুষকেই প্রাধান্য দেওয়া হয় ।
দেবী সীতাও শ্বশুরের পিণ্ডদান করেছিলেন ।
আরো জানুনঃ গীতা পাঠের সঠিক নিয়ম ও প্রয়োজনীয় মন্ত্রসমূহ
বাল্মীকি রামায়ণ অনুসারে, মাতা সীতা তাঁর শ্বশুর রাজা দশরথের পিণ্ডদান করেছিলেন । এরপর রাজা দশরথের আত্মা শান্তি পায়। বনবাসের সময় পিতৃপক্ষে রাজা দশরথের পিন্ডদানের জন্য শ্রীরাম, লক্ষ্মণ ও সীতা গয়াধামে যান। একদিন রাম-লক্ষ্মণ শ্রাদ্ধের সামগ্রী নিতে শহরের দিকে যান। এর মধ্যে আকাশবাণী হয় যে পিণ্ডদানের শুভ সময় শেষ হতে চলেছে । তখন রাজা দশরথের আত্মা মাতা সীতার কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁকেই পিন্ডদান করতে বলেন ।
শ্বশুরের ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে সীতা তখন ফল্গু নদী, কেতকী ফুল, গরু ও বটগাছকে সাক্ষী রেখে বালির পিণ্ড বানিয়ে রাজা দশরথকে দান করেন । এভাবে শাস্ত্রে পুত্রের অনুপস্থিতিতে পুত্রবধূর পিণ্ডদান বা শ্রাদ্ধ করার অধিকারের উদাহরণ রয়েছে ।