বিষ্ণু ও শিব কি এক নাকি আলাদা ?
বিষ্ণু ও শিব অবশ্যই এ্ক ।
নিচে এই বিষয়ে আলোচনা করা হলো---
বিষ্ণু ও শিবের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই । এরা একই সত্ত্বার দুটি ভিন্ন রূপ। এর প্রমাণ হলো-- বিষ্ণু ও শিবের "হরিহর" রূপ ।এছাড়াও মহাভারতের পরিশিষ্ট হরিবংশ ( অধ্যায়- ১৮৩ ) হতে বর্ণিত---
রুদ্রদেবের উপাস্য যেমন বিষ্ণু, বিষ্ণুর উপাস্যও তেমনি রুদ্রদেব । ইহারা উভয়েই একাত্মা, দৃশ্যতঃ দ্বিধাভূত হইয়া নিত্য জগতে বিচরণ করিতেছেন । শঙ্কর হইতে বিষ্ণু ভিন্ন নহেন, বিষ্ণু হইতেও রুদ্র ভিন্ন নহেন ।
মহা উপনিষদে বলা হয়েছে---
একো বৈ নারায়ণ আসীন্ ন ব্রহ্ম না ঈশানো
নাপো নাগ্নি-সমৌ নেমে দ্যাবাপৃথিবী ন নক্ষত্রাণি ন সূর্যঃ।। ( মহা উপনিষদ- ১ )
অনুবাদঃ সৃষ্টির আদিতে কেবল "পরম পুরুষ নারায়ণ" ছিলেন । ব্রহ্মা ছিল না, শিব ছিল না, অগ্নি ছিল না, চন্দ্র ছিল না, আকাশে নক্ষত্র ছিল না এবং সূর্য ছিল না ।
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে বলা হয়েছে---
"যদাহতমস্তন্ন দিবা ন রাত্রির্নসন্ন চাসন্ শিব এব কেবলঃ।" (শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ- ৪/১৮)অনুবাদঃ যখন আলো ছিল না, অন্ধকারও ছিল না, দিন ছিল না, রাত্রিও ছিল না, সৎ ছিল না, অসৎ ও ছিল না- তখন কেবলমাত্র "ভগবান শিব" ছিলেন । সুতরাং, উপরের দুটি শ্লোক থেকে বোঝা যায়-- ভিন্ন ভিন্ন উপনিষদে "বিষ্ণু" ও "শিব" দুজনেরই প্রশংসা করা হয়েছে । দুজনকেই শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে ।
তাই সহজেই বোঝা যায় যে-- বিষ্ণু ও শিবের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। বিষ্ণু ও শিব অভিন্ন ।
বিষ্ণু/কৃষ্ণ" হলো ভগবান শিবের পরম ভক্ত । ঠিক তেমনি, "শিব" হলো ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত । শৈব= যারা শিবের ভক্ত । বৈষ্ণব= যারা বিষ্ণু/কৃষ্ণ এর ভক্ত ।
স এস রুদ্রভক্তশ্চ কেশবো রুদ্রসম্ভবঃ।
সর্ব্বরুপং ভবং জ্ঞাত্বা লিঙ্গে যোহর্চ্চয়ত প্রভুম্।। (মহাভারত- ৭/১৬৯/৬২)
অনুবাদঃ শিবকে সর্ব্বময় জানিয়া যিনি শিবলিঙ্গে পূজা করিতেন, সেই রুদ্রজাত ও পরম রুদ্রভক্ত হচ্ছেন "কেশব (শ্রীকৃষ্ণ)" ।
নিম্নগানাং যথা গঙ্গা দেবানামচ্যুতো যথা।
বৈষ্ণবানাং যথা শম্ভুঃ পুরাণানামিদং তথা।। (শ্রীমদ্ভাগবত- ১২/১৩/১৬)
অনুবাদঃ নদীগণের মধ্যে গঙ্গা, দেবগণের মধ্যে অচ্যুত (শ্রীকৃষ্ণ) এবং বৈষ্ণবগণের মধ্যে শম্ভু (শিব) যেরূপ শ্রেষ্ঠ, সেইরূপ পুরাণগণের মধ্যে শ্রীমদ্ভাগবত শ্রেষ্ঠ হইয়া থাকে । উপরের দুটি শ্লোক থেকে বোঝা যায় যে---
কৃষ্ণের থেকে বড় "শিব ভক্ত" আর কেউ নেই । শিবের থেকে বড় "বিষ্ণু ভক্ত" আর কেউ নেই । সুতরাং, উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে--- "পরমেশ্বর ভগবান বিষ্ণু" ও "পরমেশ্বর ভগবান শিব" দুজনেই সমপর্যায়ভুক্ত । এই দুজনেই সর্বশ্রেষ্ঠ ।
তবে ব্রহ্মা এদের সমপর্যায়ভুক্ত নন । ব্রহ্মা একজন "দেবতা" । ব্রহ্মা কখনোই "পরমেশ্বর ভগবান নন" । ব্রহ্মার একটি নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল আছে ।
কেউ যদি উপরোক্ত এসব আলোচনার পরও শুধুমাত্র যেকোনো একজনকে "শ্রেষ্ঠ" বা "পরমেশ্বর ভগবান" বলে মনে করে তাহলে সে সবচেয়ে বড় মূর্খ ।
কারণ--- বিষ্ণু/কৃষ্ণ ও শিব দুজনেই হলেন "পরমেশ্বর ভগবান" । এনারা দুজন "এক ও অভিন্ন"। তবে আমাদের এটিও মনে রাখতে হবে যে----
ঈশ্বর একজনই । তিনি এক ও অদ্বিতীয় । হিন্দুধর্মও এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী । ঈশ্বর নিজেই বিষ্ণু ও শিব রূপ ধারণ করেছেন । এরা দুইজনই এক ঈশ্বরের দুটি "সাকার রূপ" । ঈশ্বরের নিরাকার রূপের দুটি সাকার রূপ হলো--- বিষ্ণু ও শিব ।
ঈশ্বর একজনই । তিনি এক ও অদ্বিতীয় । হিন্দুধর্মও এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী । ঈশ্বর নিজেই বিষ্ণু ও শিব রূপ ধারণ করেছেন । এরা দুইজনই এক ঈশ্বরের দুটি "সাকার রূপ" । ঈশ্বরের নিরাকার রূপের দুটি সাকার রূপ হলো--- বিষ্ণু ও শিব ।
"বিষ্ণু" ও "শিব" ঈশ্বরের কোন "অংশ নন" । বিষ্ণু ও শিব এক ও অভিন্ন।।
তারা একই পুরুষ ভিন্নরূপে প্রকাশিত হয়েছেন । উচ্চ আদালতের বিচারপতি যেমন আদালতে অবস্থানকালে একভাবে এবং তার বাড়িতে অবস্থানকালে ভিন্নভাবে জীবনযাপন করেন, এটি অনেকটা সেই রকম । বিষ্ণু রূপে ঈশ্বর চতুর্ভূজ, কিন্তু শিবরূপে তিনি দ্বিভূজ ।
ঈশ্বর তার নিজের সাকার বিষ্ণুরূপে চতুর্ভূজ শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম ধারী , আর ঈশ্বর তার নিজের সাকার শিবরূপে দ্বিভূজ (কখনো কখনো চতুর্ভূজ) ত্রিশূল ও ডমরু ধারী । আশা করি সকলের প্রশ্নের উওত্তর দিতে পেরেছি ।
❤️
ReplyDelete