বেদ ও মূর্তিপূজা
বেদ কি জড় মূর্তির উপাসনা করতে বলে ?
সনাতন
ধর্মমতে বিশ্বাস করা হয় যে বেদ ঈশ্বরের বাণী, কিন্তু ঈশ্বর তো আর সরাসরি এসে বেদ লিখে
দিয়ে যান নি, তিনি বেদের মন্ত্রগুলো বিভিন্ন ঋষির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন । এছাড়াও আমরা জানি, সনাতন ধর্মমতে পরমব্রহ্ম বা ঈশ্বর
নিরাকার, সেজন্য বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি বা তাদের ছবি থাকলেও পরমব্রহ্ম বা ব্রহ্মের
কোনো ছবি বা মূর্তি নেই । এখন এই নিরাকার ব্রহ্ম যদি সাকার রূপ ধারণ করেন, তাহলেই তাঁর
ছবি বা মূর্তি থাকা সম্ভব এবং তখনই প্রশ্ন আসবে জড় মূর্তির উপাসনার। তাহলে দেখা যাক
বেদ এ সাকার ঈশ্বরের কোনো বর্ণনা আছে কি না ?
যজুর্বেদের
১৩/৪১ নং মন্ত্রে বলা আছে,
“সহসস্র প্রতিমাং বিশ্বরূপম।’’
অর্থাৎ
ঈশ্বর সহস্র রূপে বিশ্বজুড়ে আছেন । ঈশ্বর যে আকার ধারণ করেন, এখানে কিন্তু তিনি সেই
কথা বলা হলো ।
এরপর ঋগ্বেদের ১/১৬৪/৪৬ নং মন্ত্রে বলা আছে,
“এ
আদিত্যকে মেধাবীগণ ইন্দ্র, মিত্র বরুণ ও অগ্নি বলে থাকেন ।… ইনি এক হলেও বহু বলে বর্ণনা
করে।“
অর্থাৎ
ঈশ্বর এক হয়েও যে বহু হন, সে কথা এখানেও বলা হলো, যা বিশ্বজুড়ে সহস্র রূপের সাথে মানানসই
। এই বহু রূপের মধ্যে তার কয়েকটি নাম হলো- ইন্দ্র, মিত্র বরুণ ও অগ্নি ।
এখন
দেখুন ঋগ্বেদের ১/২৫/১৩ নং মন্ত্রে বলা হয়েছে,
“বরুন
সুবর্ণের পরিচ্ছদ ধারণ করে আপন পুষ্ট শরীর আচ্ছাদন করেন ।’’
তার
মানে ঈশ্বর যে সাকার রূপ ধারণ করেন, তাতে আর সন্দেহ রইলো না ।
এছাড়াও
ঋগ্বেদের, ১/২৫/১৮ নং মন্ত্রে শুনঃশেপ ঋষি বলেছেন,
“সকলের
দর্শনীয় বরুনকে আমি দেখেছি ভূমিতে তার রথ দেখেছি, আমার স্তুতি তিনি গ্রহন করেছেন ।“
এবং
ঋগ্বেদের ৪/২৬/১ নং মন্ত্রে বলা হয়েছে,
“
আমি মনু, আমি সূর্য, আমি মেধাবী কক্ষীবান ঋষি, আমি অর্জুনীর পুত্র কুতস্য ঋষিকে অলঙ্কৃত
করেছি, আমি কবি উষণা, আমাকে দর্শন করো ।“
মানে
ঈশ্বরের সাকার রূপ এই দুটো ঋক থেকে আবারও প্রমাণিত হলো ।
এরপর
দেখুন যজুর্বেদের ৩০/১২ নং মন্ত্রে বলা হয়েছে,
“আমি
দেবলোকের উদ্দেশ্যে প্রতিমা তৈরি কারী শিল্পীকে নিযুক্ত করছি।“
এবং
মূর্তি পূজাও যেহেতু এক প্রকারের যজ্ঞ, সেহেতু ঈশ্বরের যজ্ঞ অর্থাৎ তাঁর মূর্তি কিভাবে
সম্পন্ন বা নির্মান হবে, তার নির্দেশনা দিয়ে তিনি যজুর্বেদের ১৮/১৩নং মন্ত্রে বলেছেন,
“পাষাণ,
মৃত্তিকা, পাহাড় পর্বত বালুক বনস্পতি, স্বর্ণ,
রৌপ্য লৌহ, তামা সীসা দ্বারা আমার যজ্ঞ সম্পন্ন হউক ।“
এবং
যজুর্বেদের ৫/৩০ নং মন্ত্রে তিনি তার ভক্তদের
উদ্দেশ্যে বলেছেন,
হে
শুদ্ধসত্ত্ব, তুমি অনন্তস্বরূপ ভগবানের শরীর সদৃশ ভগবত সম্বন্ধযুক্ত স্থানে উপবেশন
করো ।’’
দেবতারা
হলেন ভগবানের বিভিন্ন রূপের শরীর সদৃশ এবং দেবতাদের স্থান হলো মন্দির, তো সেই মন্দিরে
ভগবান, তার ভক্তকে উপবেশন করতে বলেছেন, নিশ্চয় যাত্রা দেখতে নয়, তার উপাসনা করতে; অর্থাৎ
মন্দিরের জড় মূর্তির মাধ্যমে যে ঈশ্বরের উপাসনা করা যায়, সেটা কিন্তু বেদ দ্বারা স্বীকৃত
।
সুতরাং
বেদ যে নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনার পাশাপাশি জড় মূর্তির উপাসনার কথা বলে, সেটা প্রমাণিত
।