জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে জামাইষষ্ঠী অনুষ্ঠিত হয় । খুবই আনন্দময় অনুষ্ঠান এটি । এদিন জামাইকে শ্বশুরবাড়িতে নিমন্ত্রণ করা হয় । খাওয়া-দাওয়ার বিশেষ আয়োজন করা হয় । জামাইকে নতুন কাপড় জামা দেওয়া হয় । জামাইও শাশুড়িসহ অন্যান্য আত্মীরকে সাধ্যমতো নতুন কাপড় প্রদান করে । এদিন ষষ্ঠীপূজাও অনুষ্ঠিত হয় । সন্তান কামনায় ও সন্তানের মঙ্গল প্রার্থনা করে ষষ্ঠীদেবীর পূজা হয় ।
জামাইষষ্ঠী কি ?
কথিত আছে, একসময় সংস্কার ছিল কন্যা যতদিন না পুত্রবতী হয় ততদিন কন্যার পিতা বা মাতা কন্যাগৃহে পদার্পণ করবেন না ৷ এই ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দেয় সন্তানধারণে সমস্যা বা সন্তান মৃত্যুর (শিশুমৃত্যু) ফলে কন্যার পিতামাতাকে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হত কন্যার বাড়ি যাওয়ার জন্য ৷ সেক্ষেত্রে বিবাহিত কন্যার মুখদর্শন কীভাবে ঘটে? তাই সমাজের বিধানদাতা জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা ষষ্ঠীকে বেছে নিলেন জামাই ষষ্ঠী হিসাবে ৷ যেখানে মেয়ে জামাইকে নেমন্তন্ন করে সমাদর করা হবে ও কন্যার মুখ দর্শন করা যাবে আর সেইসঙ্গে মা ষষ্ঠীর পুজো করে তাঁকে খুশি করা যাতে কন্যা শীঘ্র পুত্রমুখ দর্শন করতে পারে ৷
বর্তমানে অবশ্য এই সংস্কার পরিবর্তিত হয়েছে ৷ কন্যার মা-বাবা অথবা যে ব্যক্তি কন্যা সম্প্রদান করবেন তিনি এক বৎসর কন্যার বাড়ি যাবেন না বা গেলেও কন্যার বাড়ির অন্নগ্রহণ করবেন না ৷ যদিও আধুনিক শহুরে জীবনে এই সংস্কার বিশেষ গুরুত্ব পায় না ৷ সংস্কার যাই হোক না কেন, মেয়ে জামাইকে ডেকে এনে সমাদর করা ও সেইসঙ্গে কন্যা যাতে সন্তানবতী হয় সেই লক্ষ্যে ‘মা ষষ্ঠীকে’ জুড়ে দিয়ে উৎসবের নামকরণ হল জামাই ষষ্ঠী ৷
জামাইষষ্ঠী কেন পালন করা হয় ?
জামাই ষষ্ঠী মানেই বাঙালিদের কাছে একটি উৎসব ।
বহু জামাই আছেন এমন দিনে ধুতি পাঞ্জাবি পরে হাতে মিষ্টির ঝোলা ও বিশাল মাছ হাতে শ্বশুর বাড়িতে হাজির হতে পছন্দ করেন । কিন্তু, জামাই হল গিয়ে মেয়ের বর । মেয়েকে ছেড়ে জামাই আদরের এত ঘটা কেন? সেটা কখনও কেউ কি ভেবেছেন ?
বাঙালি সমাজে প্রচলিত প্রবাদ আছে ‘যম জামাই ভাগনা কেউ নয় আপনা ।
কিন্তু, নতুন পাখার উপর আমের পল্লব এবং আম ও তৎসহযোগে পাঁচ ধরনের ফল সাজিয়ে জামাই এর মঙ্গল কামনায় শাশুড়ির দল ‘জামাই ষষ্ঠীর দিনে যে ব্রত রক্ষায় ব্রতী হন তার সারমর্মটা কী ?
করমচা সহ পাঁচ থেকে সাত বা নয় রকমের ফল কেটে কাঁঠাল পাতার উপর সাজিয়ে রাখতে হয় শাশুড়িকে ।
যে জামাই কখনও আপন হয় না বলে প্রবাদ, তাহলে তার জন্য এত ঘটা করে জামাই ষষ্ঠী পালন করার কি দরকার । কি দরকার পুজোর শেষে জামাইকে পাখা হাওয়া আর শান্তি জলের ছিটা দেওয়া ! এমনকী, মা ষষ্ঠীর আশির্বাদ বলে জামাইয়ের হাতে হলুদ মাখানো সুতো পরিয়ে দেওয়া ! এ সবই বা কেন? এই সব কিছুরই পিছনে রয়েছে গভীর স্বার্থ । আর এই স্বার্থটা হল জামাইকে তোষামেদ। কারণ, এতে মেয়ে ভাল থাকবে ।
এখানেই শেষ নয়, ১০৮টি দুর্বা বাঁধা আঁটি দিয়ে পুজোর উপকরণ সাজাতে হয় ।
এখানেই শেষ নয় জামাই কে আশীর্বাদ করে ষাট ষাট বলাটাও শাশুড়িদের নিয়মের মধ্যে পড়ে । মনে রাখবেন এর সমস্তটাই হচ্ছে শুধু জামাই এর জন্য । আসলে মেয়ের জন্য মঙ্গলচিন্তা এবং তাঁর । সংসার অঁটুট রাখার প্রার্থনাতেই এত আয়োজন হয় ।