Table Of Content (toc)
চৈত্রসংক্রান্তি
বাংলা মাসের শেষ দিনটিকে বলা হয় সংক্রান্তি। সেই ধারাবাহিকতায় চৈত্র মাসের শেষ দিনটিকে বলা হয় চৈত্রসংক্রান্তি । এ দিনটি বাংলা বছরের শেষ দিনও বটে । এ দিনকে ঘিরে থাকে নানা অনুষ্ঠান-উৎসবের আয়োজন । চৈত্রসংক্রান্তি অনুসরণ করেই আসে পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ । শাস্ত্র, ধর্মীয় বিশ্বাস ও লোকাচার অনুসারে চৈত্র সংক্রান্তির এই দিনে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস, নানাবিধ পূজা-পার্বণ প্রভৃতি ক্রিয়াকরক্মে পুণ্যজনক মনে করা হয়। আবহমান বাংলার ঐতিহ্য আর লোকায়ত উৎসবের আমেজ পাওয়া যায় এই দিনটিকে ঘিরে । চৈত্রসংক্রান্তি উদ্যাপন উপলক্ষ্যে অঞ্চলভেদে নানাবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ।
নীলপূজা
চৈত্রসংক্রান্তি উদযাপন হেতু শিব বা নীলপূজার আয়োজন করা হয় । এ দিন ভক্তরা নীলকে সুসজ্জিত করে গীতিবাদ্য সহযোগে বাড়ি বাড়ি ঘোরান এবং ভিক্ষা সংগ্রহ করেন । নীলের গানকে বলা হয় অষ্টক গান । সন্ধ্যাবেলায় সকলের কল্যাণার্থে ভল্যাণার্থে ক্তরা প্রদীপ জ্বালিয়ে নানা উপচার দিয়ে শিবপূজা করেন । এরপর প্রসাদের মাধ্যমে সারাদিনের উপবাস ভঙ্গ করেন । নীলপূজার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নীল নাচ এবং শিবের গাজন । উত্তরবঙ্গে কোনো কোনো অঞ্চলে একে গম্ভীরা পূজা বলে ।
চড়কপূজা
লোকউৎসব হিসেবে চড়কপূজা বেশ পরিচিত । চড়কপূজা উপলক্ষ্যে যে আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়ে থাকে তা অনেক এলাকায় গাজন, গম্ভীরাপূজা বা নীলপূজা নামে পরিচিত । চৈত্রের দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে বৃষ্টির জন্য চাষিরা পালা গানের আয়োজন করে থাকে । যারা চড়কপূজা উপভোগ করতে আসে তারা কোনো ধর্মের বাঁধনে আবদ্ধ নয় । সকাল থেকে সন্ধ্যা সময়জুড়েই মেলা চলতে থাকে মহাসমারোহে । চড়কপূজা যদিও নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর আচার-অনুষ্ঠান কিন্তু একে কেন্দ্র করে যে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে তাতে বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুস্পষ্ট প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায় । চৈত্রসংক্রান্তি উদযাপন উপলক্ষ্যে অঞ্চলভেদে আরও নানাবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । চৈত্রসংক্রান্তির দিনে গ্রামবাংলায় খাওয়া হয় ছাতু, দই ও পাকা বেল সহযোগে এক বিশেষ শরবত । এদিনে নারীরা একটি নির্দিষ্ট খেজুরগাছের গোড়ায় দুধ এবং ডাবের জল ঢেলে পূজা করেন । পূজা শেষে একজন খেজুরগাছ থেকে খেজুর-ভাঙা ভক্তদের মাঝে বিলাতে থাকেন । সেই খেজুর খেয়ে উপোস ভঙ্গ করেন ভক্তরা । একে খেজুর ভাঙ্গা উৎসব বলে ।