ভাইফোঁটা কি এবং কেন করা হয় ?
কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে ভাতৃদ্বিতীয়া উৎসব পালন করা হয় । এ দিনটি বড়ই পবিত্র । পুরাণে উল্লেখ আছে কার্তিক মাসে শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে যমুনাদেবী তার ভাই যমের মঙ্গল কামনায় পূজা করেন । তারই পুণ্যপ্রভাবে যমদেব, অমরত্ব লাভ করেন । এ কল্যাণব্রত স্মরণে রেখে বর্তমান কালের বােনেরাও এ দিনটি পালন করে আসছে ।
ভাইকে যাতে কোনাে বিপদ-আপদ স্পর্শ করতে না পারে সেজন্য বােনদের সতত কামনা ! এদিন উপবাস থেকে ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেওয়া হয় । বাঁ হাতের কড়ে অথবা অনামিকা আঙুল দিয়ে চন্দনের (ঘি, কাজল বা দধিও হতে পারে) ফোঁটা দিয়ে ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে বলা হয়ঃ
ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা,
যমের দুয়ারে পড়ল কাটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা,
আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা॥
যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে
যম হল অমর।
আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে
আমার ভাই হোক অমর॥
এজন্য এ অনুষ্ঠানের এক নাম ‘ভাইফোঁটা’ । ভাইকে ফল, মিষ্টি, পায়েস, লুচি প্রভৃতি উপাদেয় খাদ্য পরিবেশন করা হয় । শুধু পারিবারিক গণ্ডীর মধ্যেই নয়, এ উৎসবের মধ্য দিয়ে জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকলের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববােধ জাগ্রত করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তােলা সম্ভব ।
ভাইফোঁটার সামাজিক গুরুত্ব
আমরা সামাজিক জীব । আমাদের সমাজ তৈরী হয় প্রথমে ঘর থেকে । মা-বাবা, ভাই-বোন দিয়ে যে পরিবার শুরু হয়, সেই পরিবারটিই সময়ের সাথে সাথে আত্মীয়তার বন্ধন বিস্তৃত করে, ঘর থেকে বেরিয়ে প্রতিবেশী, প্রতিবেশী পেরিয়ে পাড়া, গ্রাম ছাড়িয়ে একদিন সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ে । আজ বাংলার যে নানা লোকাচার রয়েছে, যা দিয়ে বাঙালির সংস্কৃতির সতন্ত্রতাকে চিহ্নিত করা যায়, তারই অনিবার্য রূপ ভাইফোঁটা ।