Table Of Content (toc)
দীপাবলি কি ?
দীপাবলি বা দেওয়ালি হল একটি পাঁচ দিন-ব্যাপী হিন্দু উৎসব । আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশীর দিন ধনতেরস অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দীপাবলি উৎসবের সূচনা হয় । কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উৎসব শেষ হয় । নবরাত্রি উৎসব শেষ হওয়ার ১৮ দিনপর দীপাবলি শুরু হয় । গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে, মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য-নভেম্বরের মধ্যে দীপাবলি অনুষ্ঠিত হয় । দীপাবলি ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, মরিশাস, গুয়ানা, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, সুরিনাম, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ফিজিতে একটি সরকারি ছুটির দিন । হিন্দুদের কাছে, দীপাবলি একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব । এই সব হিন্দুরা বাড়িতে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ।
দীপাবলি কেন পালন করা হয় ?
জৈন মতে, ৫২৭ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে মহাবীর দীপাবলির দিনেই মোক্ষ বা নির্বাণ লাভ করেছিলেন । ১৬১৯ খ্রিস্টাব্দে শিখদের ষষ্ঠ গুরু হরগোবিন্দ ও ৫২ জন রাজপুত্র দীপাবলির দিন মুক্তি পেয়েছিলেন বলে শিখরাও এই উৎসব পালন করেন । আর্য সমাজ এই দিনে স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর মৃত্যুদিন পালন করে । তারা এই দিনটি “শারদীয়া নব-শস্যেষ্টি” হিসেবেও পালন করেন । “দীপাবলি” নামটির অর্থ “প্রদীপের সমষ্টি” । এই দিন হিন্দুরা ঘরে ঘরে ছোটো মাটির প্রদীপ জ্বালেন । এই প্রদীপ জ্বালানো অমঙ্গল বিতাড়নের প্রতীক । বাড়িঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সারা রাত প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলে ঘরে লক্ষ্মী আসেন বলে হিন্দুরা বিশ্বাস করেন ।
দীপাবলি শব্দের অর্থ
দীপাবলি হচ্ছে একটি সংস্কৃত শব্দ । এই দীপাবলি শব্দের মধ্যে রয়েছে দুটি শব্দ । দীপা বা “দীপ” শব্দের অর্থ হলো “আলো” আর “অবলি” শব্দের অর্থ হলো “সারি” । একত্রে এই দুই শব্দের অর্থ হচ্ছে “আলোর সারি” ।
অমঙ্গল বিতাড়নের জন্য আতসবাজিও পোড়ানো হয় । দীপাবলির সময় নতুন পোশাক পরা, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণের প্রথাও আছে।.ধনতেরসের দিন অনেক ভারতীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের অর্থবর্ষের সূচনা হয় । দ্বিতীয় দিনটিকে বলে নরক চতুর্দশী । তৃতীয় দিন অমাবস্যায় লক্ষ্মীর পূজা হয় । এই দিন পশ্চিমবঙ্গে কালীপূজা হয় । চতুর্থ দিন কার্তিক শুক্লা প্রতিপদ । এই দিন বৈষ্ণবরা গোবর্ধন পূজা করেন । পঞ্চম দিন যমদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটা । এই দিন বোনেরা তাদের ভাইদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে ।
মহালয়ায় শ্রাদ্ধগ্রহণের জন্য যমলোক ছেড়ে যে পিতৃপুরুষগণ মর্ত্যে আগমন করেন বলে, তাঁদের পথ প্রদর্শনার্থে উল্কা জ্বালানো হয় । এ কারণে ঐ দিন আলোকসজ্জা ও বাজি পোড়ানো হয় । কেউ কেউ রাত্রিতে নিজগৃহে দরজা-জানালায় মোতবাতি জ্বালায়; কেউবা লম্বা বাঁশের মাথায় কাগজের তৈরি ছোট ঘরে প্রদীপ জ্বালায় । একে আঞ্চলিক ভাষায় বলা হয় আকাশপ্রদীপ । দীপাবলি মানে আলোর উৎসব । প্রতি বছরই দুর্গাপূজার আনন্দ-উচ্ছাস মিইয়ে যাবার আগেই দীপাবলি আসে । বিজয়ার ভাসানে- পাঁচদিনের আনন্দ-বিদায়ে অবচেতনে হলেও যে বিয়োগ-বিধূর চেতনায় আবিষ্ট হয় মন সেই মন দীপাবলিকে সামনে রেখেই আবার আনন্দের স্বপ্ন দেখে । বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে দীপাবলীতে কালী পূজা হয় । অন্যান্য অঞ্চলে এই দিনে গণেশ পূজা এবং লক্ষ্মী পূজাও করা হয় ।
জৈন ও শিখ ধর্মে দীপাবলি
জৈন ধর্মের প্রবর্তক মহাবীর ৫২৭ অব্দে দীপাবলী দিনে মোক্ষ (নির্বাণ) লাভ করেন । দীপাবলীর দিনে শিখ ধর্মগুরু হরগোবিন্দ জী অমৃতসরে ফিরে আসেন । সম্রাট জাহাঙ্গীরকে পরাজিত করে গোয়ালিওর দুর্গ থেকে বায়ান্ন হিন্দু রাজাকে মুক্ত করে- তাঁর এই প্রত্যাবর্তনকে শিখগণ পালন করেন । তারা এই দিনকে ‘বন্দী ছোড় দিবস’ও বলেন ।
দীপাবলির গুরুত্ব ও তাৎপর্য
আলোকসজ্জার এই দিবস অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলো জ্বালার দিন । নিজের ভেতরের বাহিরের সকল অজ্ঞতা ও তমঃকে দীপ শিখায় বিদূরিতকরার দিন । প্রেম-প্রীতি-ভালবাসার চিরন্তন শিখা প্রজ্বলিত করার দিন । দেশ থেকে দেশে, অঞ্চল থেকে অঞ্চলে- এই দিনের মাহাত্ম্য ভিন্ন ভিন্ন । তবে মূল কথা এক । আর আধ্যাত্মিকতার গভীর দর্শনে এই দিন- আত্মাকে প্রজ্বলিত করে পরিশুদ্ধ করে সেই পরমব্রহ্মে লীন হওয়ার দিন ।