Table Of Content (toc)
রাধা অষ্টমী কি ?
রাধা অষ্টমী হচ্ছে শ্রীমতি রাধারানীর আবির্ভাব তিথি। রাধারানী ভাদ্রমাসের শুক্লাষ্টমী তিথীতে ধরিত্রীকে পবিত্র করে আবির্ভুত হয়েছিলেন । বৈষ্ণব সম্প্রাদায়ের মধ্যে এই অষ্টমী তিথী মহাসমারোহে দীর্ঘদিন ধরে উদযাপিত হয়ে আসছে । তবে সাধারন মানুষের মধ্যে এর প্রভাব খানিকটা কম । ভগবান শ্রী কৃষ্ণের হৃদিনী শক্তির প্রতিরুপ স্বরূপা হচ্ছেন রাধাঠাকুরানী ।
এখানেঃ রাধাষ্টমী ব্রত মাহাত্ম্য
যে এ রাধাষ্টমী ব্রত পালন করেন না শতকোটি কল্পেও তার নরক হতে নিষ্কৃতি নেই । তারা চিরতরে নরকে পতিত হবেন । পরবর্তীতে জন্ম হলেও বিধবা হয় । এখন আপনারাই স্বয়ং বিচার করুন এই মহান ব্রত পালন করবেন কি না ?
আরো জানুনঃ রাধাষ্টমীর পারণ মন্ত্র
রাধাষ্টমী ব্রত পালনের নিয়ম
রাধার জন্ম মধ্যাহ্ন সময়ে হয়েছিল তাই উপবাস সময় দুপুর ১২ টা পর্যন্ত । রাধাষ্টমী এর আগের দিন নিরামিষ খেতে হয় একে সংযম বলা হয় । এবং সংযমের দিন সন্ধ্যায় সংকল্প ও রাধারানীর অধিবাস দিতে হয়, অধিবাসে বিভিন্ন মাঙ্গলিক দ্রব্য রাধারাণীকে দর্শন করাতে হয়( মাঙ্গলিক দ্রব্য পান সুপারি, কলা পাতা, কলা,ঘট, ধান দূর্বা, আম পাতা, শাড়ি, গামছা, সুগন্ধি ফুল, ডাব ইত্যাদি) । তারপর ঘুমানোর আগে অবশ্যই ব্রাশ করে নিতে হবে যাতে করে, খাবারের কুচি মুখে লেগে না থাকে । এরপর রাধাষ্টমীর দিন ভোর ভোর শয্যা ত্যাগ করতে হয় । তারপর রাধারানী কে ভোগ দেওয়ার জন্য প্রসাদ নিবেদন করুন ।
রাধাষ্টমী পুজো বিধি
সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে ধোঁয়া পরিস্কার পোশাক পরুন । এবার একটি চৌকিতে লাল বা হলুদ কাপড় পেতে তার উপরে শ্রী কৃষ্ণ এবং রাধার মূর্তিটি স্থাপন করুন । সেই সঙ্গে পুজোর ঘটও স্থাপন করুন।পঞ্চামৃত দিয়ে রাধা ও কৃষ্ণকে অভিষেক করাবেন । এরপর দুজনকেই নতুন বস্ত্র পরিয়ে সাজিয়ে দিন । বিভিন্ন বিভিন্ন মন্ত্রের দ্বারা পূজা করতে হয়, যদি মন্ত্র না জানা থাকে তবে মহামন্ত্র বলে সকল দ্রব্য নিবেদন করুন । সময় মতো ঘত পুজো করার সঙ্গে সঙ্গেই রাধা ও কৃষ্ণের পুজো করুন । পদ্ম ফুল দিলে রাধারাণী অধিক প্রসন্ন হন । তারপর ফুল-ফল নৈবেদ্য, মিষ্টি সাজিয়ে নিবেদন করুন । অন্ন ভোগও দিতে পারেন । রাধারাণী প্রিয় ভোগ " দই আরবি" কচুর মুখী দিয়ে তৈরি করা হয় ।
রাধারাণী দুধের তৈরি দ্রব্যও অতি প্রিয় । বিভিন্ন রকমের দুধ দিয়ে তৈরি করে ভোগ নিবেদন করতে পারেন, এর পরে রাধারানীর উপরে শ্লোক ভজন গীত গেয়ে রাধারাণী কে সন্তুষ্ট করা হয়। প্রসাদ হিসাবে দুধের উপাদান দিলে ভালো হয় । প্রসাদ দেওয়ার পরে প্রসাদ এর উপরে অবশ্যই তুলসীপাতা রাখবেন ।
এরপর রাধা কৃষ্ণের প্রণাম মন্ত্র ৩ বার জপ করুন , তারপর রাধা কৃষ্ণের সুন্দর করে আরতি করুন ।
পুষ্পাঞ্জলি দেবেন রাধাকৃষ্ণর প্রণাম মন্ত্র বলে ৩ বার ।
পূজার শেষে অবশ্যই ক্ষমা প্রার্থনা মন্ত্র বলে পূজা সমাপন করবেন । কারন পূজা করার সময় আমাদের দ্বারা অজান্তেই অনেক রকম ভুল ত্রুটি হয়ে যায় ।
শ্রীকৃষ্ণের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা মন্ত্র
নমো যদক্ষরং মাত্রাহীনঞ্চ যদ্ ভবেৎ ।
পূর্ণং ভবতু ত্বং সর্বং ত্বং প্রসাদাৎ জনার্দ্দন ।।
মন্ত্রহীনং ক্রিয়াহীনং ভক্তিহীনং জনার্দ্দন ।
যৎ পূজিতং ময়াদেব পরিপূর্ণং তদস্তুমে ।।
রাধারানীর জন্ম যেহেতু মধ্যাহ্নে । তাই এই ব্রতটি বারোটা পর্যন্ত হয়ে থাকে । বারোটা পর্যন্ত উপবাস করে তারপরে ভোগ নিবেদন করতে হয় । যদি পূর্ণ দিন উপবাস থাকেন তবে পরের দিন সময় মত পারণ করে নেবেন ।
সূর্যোদয় থেকে ৫ঃ২৯ মিনিটের মধ্যে পারণ করে নেবেন এবং যারা ১২ টা পর্যন্ত উপবাস করবেন তাদের পারণ করতে হবেনা ।
ব্রতের পরেরদিন ব্রাহ্মণ ও বৈষ্ণবদের ভোজন করিয়ে ব্রত সমাপন করা হয় ।
আরো জানুনঃ রাধাষ্টমীর পারণ মন্ত্র
পারণের সময়
সূর্যোদয় থেকে ৫ঃ২৯ মিনিটের মধ্যে ।
বলা হয়, রাধার সঙ্গে সম্মিলিত রূপে থাকলে তবেই কৃষ্ণের নামের আগে শ্রী সম্বোধন যুক্ত হয় । তাই, যাঁরা কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ব্রত উদযাপন করেছেন, তাঁরা যদি রাধাষ্টমী ব্রত পালন না করেন, তবে পূর্ণ ফললাভ হবে না ।