Table Of Content (toc)
সন্ধি পূজা কি ?
দুর্গাপূজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সন্ধিপূজা । অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথি শুরুর ২৪ মিনিটকে বলা হয় সন্ধিক্ষণ । এই সন্ধিক্ষণে তন্ত্রমতে করা হয় ‘সন্ধিপূজা ’।
সন্ধি পূজা কেন করা হয় ?
সন্ধিপূজা আসলে অসুরনাশিনী দেবী দুর্গার আর এক অসুরদলনী রূপের পূজা । সেই দেবীর নাম 'চামুণ্ডা' । অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে দেবী চামুণ্ডা চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে নিধন করেছিলেন । তাই অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে দেবী চামুণ্ডার পূজা করা হয় ।
এখানেঃ দুর্গা পূজা পদ্ধতি pdf ডাউনলোড করুন
সন্ধিপূজার সময় মায়ের পায়ে নিবেদিত হয় ১০৮ লাল পদ্ম । এই ১০৮ টি পদ্মের পিছনেও আছে দু'টি পৌরাণিক কাহিনি । অসুর নিধনকালে দেবী দুর্গার সারা অঙ্গ জুড়ে সৃষ্টি হয়েছিল ১০৮টি ক্ষত । ক্ষতগুলির অসহনীয় জ্বালা জুড়োবার জন্য দেবাদিদেব মহাদেব মা দুর্গাকে দেবীদহে স্নান করার পরামর্শ দিয়েছিলেন ।
দেবীদহে স্নান করার পর মায়ের শরীরের সেই ১০৭টি ক্ষত থেকে সৃষ্টি হয়েছিল ১০৭টি পদ্ম । কিন্তু একটি ক্ষত তখনও অবশিষ্ট ছিল । দেবী দুর্গাকে ১০৮ তম ক্ষতের জ্বালায় কষ্ট পেতে দেখে মহাদেবের চোখ থেকে নির্গত হয়েছিল এক ফোঁটা অশ্রু । অশ্রুকণাটি গিয়ে পড়েছিল মায়ের ১০৮ তম ক্ষতে । মিলিয়ে গিয়েছিল মায়ের শরীরের অবশিষ্ট ক্ষতটিও । দেবীদহে থেকে গিয়েছিল ১০৭ টি পদ্ম ।
এখানেঃ দুর্গা পূজা করতে কি কি উপকরণ লাগে ? জেনে নিন
ত্রেতা যুগে লঙ্কেশ্বর রাবণকে বধ করার জন্য সন্ধিপূজার শেষে শ্রীরামচন্দ্র দেবীর পায়ে ১০৮টি পদ্ম উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন । তাই ভক্ত হনুমানকে পাঠিয়েছিলেন দেবীদহে । কিন্তু দেবীদহ থেকে ১০৭ টি পদ্ম নিয়ে ফিরেছিলেন পবনপুত্র । কারণ দেবীদহে আর পদ্ম ছিল না । সুতরাং মায়ের পায়ে দেওয়ার জন্য একটি পদ্ম কম পড়েছিল । সন্ধিক্ষণ চলে যাওয়ার উপক্রম হলে শ্রীরামচন্দ্র ধনুর্বাণ দিয়ে নিজের নীল পদ্মের ন্যায় চক্ষু দুটির মধ্যে একটি উৎপাটন করে মায়ের পায়ে অর্পণ করতে চেয়েছিলেন ১০৮ তম পদ্ম হিসেবে । চক্ষু উৎপাটনের মুহূর্তে অবতীর্ণ হয়েছিলেন দেবী দুর্গা । মায়ের বরে বলীয়ান শ্রীরামচন্দ্র এই অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণেই রাবণ বধ করেছিলেন ।
সন্ধি পূজার জন্য কোন ধরনের উপকরণ প্রয়োজন ?
সেই থেকেই সন্ধিপূজায় ১০৮টি পদ্মই মায়ের পায়ে নিবেদন করা হয় । মায়ের সামনে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় মাটির তৈরি ১০৮ টি প্রদীপ । সন্ধিপূজায় অনান্য উপকরণ হিসেবে লাগে স্বর্ণাঙ্গুরীয়ক (একটি), লোহা ও নথ (একটি), চেলির শাড়ি (একটি), শাড়ি (একটি), মধুপর্কের কাঁসার বাটি (একটি), থালা (একটি), ঘড়া (একটি), দধি, চিনি, মধু, ঘৃত, বালিশ (একটি), মাদুর (একটি), চাঁদমালা(একটি), ভোগ ও আরতির উপকরণ । নৈবেদ্যর মধ্যে প্রধান নৈবেদ্য হিসাবে লাল ফল এবং পুষ্পাদির মধ্যে জবাফুল থাকতেই হবে ।
সন্ধি পূজার মাহাত্ম্য
‘স্মৃতি সাগর’ গ্রন্থে সন্ধিপুজো সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
“অত্র যা ক্রিয়তে পূজা বিজ্ঞেয়া সা মহাফলা” ।
অর্থাৎ সন্ধিপুজো করলে মহাফল লাভ হয় ।
সন্ধি পূজা পদ্ধতি
সন্ধি পূজার পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্র
পুষ্প ও বিল্বপত্র হাতে নিয়ে
প্রথম বার
নমঃ মহিষগ্নি মহামায়ে চামুন্ডে মুন্ডমালিনি
আয়ুরারোগ্য বিজয়ং দেহি দেবী নমোস্তুতে
এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ
ওঁ হ্রীঃ শ্রীঃ চামুণ্ডা দেবতা য়ৈ নমঃ ।
ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে
ওঁ ভদ্রকাল্যৈ ভগবত্যৈ দুর্গায়ৈ নমঃ
দ্বিতীয় বার
তারা চোগ্রা মহোগ্রা চ বজ্রা কালী সরস্বতী।
কামেশ্বরী চ চামুণ্ডা ইত্যাষ্টৌ তারিণ্যো মতাঃ।।
দংষ্ট্রাকরালবদনে শিরোমালাবিভূষণে ।
চামুণ্ডে মুণ্ডমথনে নারায়ণি নমোহস্তু তে।।
এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ
ওঁ হ্রীঃ শ্রীঃ চামুণ্ডা দেবতা য়ৈ নমঃ ।
ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে ।
ওঁ ভদ্রকাল্যৈ ভগবত্যৈ দুর্গায়ৈ নমঃ ।।
তৃতীয় বার
জয়স্ব দেবি চামুণ্ডে জয় ভূতাঽপহারিণি ।
জয় সর্বগতে দেবি কালরাত্রি নমোঽস্তু তে ॥
কালি করালবিক্রান্তে কালরাত্রি নমোঽস্তু তে ।
সর্বশস্ত্রভৃতে দেবি নমো দেবনমস্কৃতে ॥
এষ সচন্দন-পুষ্পবিল্বপত্রাঞ্জলিঃ
ওঁ হ্রীঃ শ্রীঃ চামুণ্ডা দেবতা য়ৈ নমঃ ।
ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে ।
ওঁ ভদ্রকাল্যৈ ভগবত্যৈ দুর্গায়ৈ নমঃ ।।
আরো জানুনঃ দুর্গা প্রতিমায় কেন পতিতালয়ের মাটি লাগে ?
সন্ধি পূজার প্রণাম মন্ত্র
কালী করালবদনা বিনিষ্ক্রান্তাসিপাশিনী।
বিচিত্র-খট্বাঙ্গধরা নরমালাবিভূষণা।
দ্বীপিচর্ম্ম-পরীধানা শুষ্কমাংসাতিভৈরবা।।
অতিবিস্তার-বদনা জিহ্বাললন-ভীষণা।
নিমগ্নারক্তনয়না নাদাপূরিতদিঙ্মুখা।
সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে।
শরণ্যে ত্রম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্তুতে।।
নমঃ সৃষ্টিস্তিতিবিনাশানাং শক্তিভূতে সনাতনি
গুণাশ্রয়ে গুণময়ে নারায়ণি নমোস্তু তে।
জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী
দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোস্তু তে।
নমঃ শরণাগতদীনার্ত পরিত্রাণপরায়ণে
সর্বস্যাতিহরে দেবী নারায়ণি নমোস্তু তে।
নমঃ আয়ুর্দ্দেহি যশো দেহি ভাগ্যং ভগবতি দেহি মে
পুত্রান্ দেহি ধনং দেহি সর্ব্বান্ কামাশ্চ দেহি মে।
হর পাপং হর ক্লেশং হর শোকং হরাসুখম
হর রোগং হর ক্ষোভং হর মারীং হরপ্রিয়ে ।।
চিতিশক্তিং নির্ব্বিকারং পরব্রহ্মস্বরূপিণীম্ ।
প্রণামামি মহামায়াং যোগনিদ্রা সনাতনীম্ ।।
ওঁ মহামায়ে জগন্মাত কালিকে ঘোর দক্ষিণে ৷
গৃহাণ্ বন্দনে দেবী নমস্তে শংকর প্রিয়ে ৷৷
ওঁ যদক্ষরং পরিভ্রষ্টং মাত্রাহীনঞ্চ য়দ্ ভবেৎ ৷
পুরনং ভবতু যৎ সর্ব, তৎ প্রসাদৎ মহেশ্বরী ৷৷
সর্বস্বরূপে সর্বেশে সর্বশক্তিসমন্বিতে
ভয়েভ্য়স্ত্রাহি নো দেবি দুর্গে দেবি নমোஉস্তুতে
জয় মা। জয় মা। জয় মা। জয় জয় মা।।