অন্নদা একাদশীর মাহাত্ম্য
অন্নদা একাদশীর মাহাত্ম্য ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বর্ণনা করা হয়েছে ।
মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন—হে কৃষ্ণ! ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম কি, তা শুনতে আমি অত্যন্ত আগ্রহী । এ শ্রীকৃষ্ণ বললেন-হে রাজন ! আমি সবিস্তারে এই একাদশীর কথা বর্ণনা করছি। আপনি একাগ্রচিত্তে শ্রবণ করুন । ভাদ্রের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশীকে বলা হয় ‘অন্নদা' । এই তিথি সর্বপাপবিনাশিনী । যিনি শ্রীহরির অর্চনে এই ব্রত পালন করেন, তিনি সর্বপাপ মুক্ত হন । এমনকি এই ব্রতের নাম শ্রবণেই রাশি রাশি পাপ বিদূরিত হয়ে যায় । এই ব্রত প্রসঙ্গে একটি পৌরাণিক ইতিহাস রয়েছে ।
রাজা হরিশ্চন্দ্রের উপাখ্যান
প্রাচীন কালে হরিশচন্দ্র নামে এক নিষ্ঠাপরায়ণ সত্যবাদী, চক্রবর্তী রাজা ছিলেন। পূর্ব কর্মফল ও প্রতিজ্ঞার সত্যতা রক্ষায় তিনি রাজ্যভ্রষ্ট হন। অবস্থা এমন হল যে, তিনি নিজের স্ত্রী-পুত্র এবং অবশেষে নিজেকেও পর্যন্ত বিক্রি করতে বাধ্য হলেন । হে রাজেন্দ্র !
এই পুণ্যবান রাজা চণ্ডালের দাসত্ব স্বীকার করেও সত্যরক্ষার্থে দৃঢ়নিষ্ঠা প্রদর্শন করেছিলেন । তিনি শ্মশানে মৃতব্যক্তির বস্ত্রও কর রূপে গ্রহণ করতেন । এইভাবে তার বহু বছর কেটে গেল । দুঃখসাগরে নিমজ্জিত হয়ে কি করি, কোথায় যাই, কিভাবে এ দুর্দশা থেকে উদ্ধার পাই’—এই চিন্তায় তিনি দিনরাত্রি বিভাের হলেন । এমন সময় দৈবক্রমে গৌতম ঋষি রাজার কাছে এলেন । রাজা মুনিকে দর্শন করে ভক্তিভরে প্রণাম করলেন । করযােড়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে একে একে নিজের সমস্ত কথা জানালেন । রাজার দুঃখের কথা শুনে মুনিবর বিস্ময়াপন্ন হলেন ।
আরো জানুনঃ একাদশীতে যা যা করা যাবে না!
অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে তিনি বললেন—“হে রাজন ! ভাদ্র মাসে কৃষ্ণপক্ষের একদশী অন্নদা নামে জগতে প্রসিদ্ধ । আপনি এই ব্রত পালন করুন । এই ব্রতপ্রভাবে আপনার সমস্ত পাপের বিনাশ হবে । আপনার ভাগ্যবশত আগামী সাত দিন পরেই এই তিথির আবির্ভাব হবে ।
ঐ দিন উপবাস থেকে রাত্রি জাগরণ করবেন । এইভাবে ব্রত উদযাপনে আপনার সমস্ত পাপক্ষয় হবে । হে রাজন ! আপনার পুণ্যপ্রভাবে আমি এখানে এসেছি জানবেন । এইকথা বলে গৌতম মুনি অন্তর্হিত হলেন ।
ঋষিবরের উপদেশ মতাে তিনি শ্রদ্ধা সহকারে সেই ব্রত পালন করলেন । তার ফলে তার সমস্ত পাপ দূর হল । হে মহারাজ ! এই ব্রতের প্রভাব শ্রবণ করুন । যথাবিধি এই ব্রত পালনে বহু বছরের । দুঃখভােগের অবসান হয় । ব্রতের প্রভাবে রাজা হরিশ্চন্দ্রের সকল দুঃখ সমাপ্ত হল । পুনরায় তিনি স্ত্রীকে ফিরে পেলেন এবং তাঁর । মৃতপুত্রও জীবিত হল । আকাশ থেকে দেবগণ দুন্দুভিবাদ্য ও পুষ্পবর্ষণ করতে লাগলেন । নিষ্কণ্টক রাজ্যসুখ ভােগ করে অবশেষে আত্মীয়স্বজন ও নগরবাসী সহ স্বর্গে গমন করলেন ।
আর তা যে মানুষ নিষ্ঠা সহকারে এই ব্রত পালন করেন, তিনি শ্রীহরি চরণে । ভক্তি লাভ করে অবশেষে দিব্যধামে গমন করেন । এই ব্রতের মাহাত্ম্য পাঠ ও শ্রবণে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয় ।