পবিত্রারোপণ একাদশী 2023
একদিন মহারাজ যুধিষ্ঠির ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন— হে প্রভু ! শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি তা কৃপা করে আমাকে বলুন ।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন-হে মহারাজ ! এখন আমি সেই পবিত্র ব্রত মাহাত্ম্য বর্ণনা করছি, মনােযােগ দিয়ে তা শ্রবণ করুন । যা শােনামাত্রেই বাজপেয় যজ্ঞের ফল লাভ হয় ।
আরো জানুনঃ একাদশীর দিন যা যা করবেন না!
প্রাচীন কালে দ্বাপর যুগের শুরুতে মহিজীৎ নামে এক বিখ্যাত রাজা ছিলেন । তিনি মাহিষ্মতী নগরে রাজত্ব করতেন । কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে তার মনে বিন্দুমাত্র সুখ-শান্তি ছিল না । কেননা তিনি ছিলেন অপুত্রক । পুত্ৰহীনের ইহলােক পরলােক কোথাও সুখ হয় না’ এইরূপ চিন্তা করতে করতে বহুদিন কেটে গেল । কিন্তু তবুও পুত্রমুখ দর্শনে রাজা বঞ্চিতই রইলেন । নিজেকে অত্যন্ত দুর্ভাগা মনে করে রাজা চিন্তাগ্রস্ত হলেন । প্রজাদের সামনে গিয়ে বলতে লাগলেন হে প্রজাবৃন্দ ! আপনারা শুনুন ।
আমি এই জন্মে তাে কোন পাপকাজ করিনি, অন্যায়ভাবে আমার রাজকোষ বৃদ্ধি করিনি, ব্রাহ্মণ বা দেবতাদের সম্পদ কখনও গ্রহণ করিনি উপরন্তু প্রজাদেরকে পুত্রের মতাে পালন করেছি, ধর্ম অনুযায়ী পৃথিবী শাসন করেছি । দুষ্টদের যথানুরূপ দণ্ড দিয়েছি, সজ্জন ব্যক্তিদের যথাযােগ্য সম্মান করতেও কখনও অবহেলা করিনি । তাই হে ব্রাহ্মণগণ, এই প্রকার ধর্মপথ অবলম্বন করা সত্ত্বেও কেন আমার পুত্র লাভ হল না, তা আপনারা কৃপা করে অনুসন্ধান করুন ।
১০ম রাজার এই প্রকার কাতর উক্তি শ্রবণে ব্যথিত রাজভক্ত পুরােহিত ব্রাহ্মণগণ রাজার মঙ্গলের জন্য গভীর বনে ত্রিকালজ্ঞ মুনিঋষির কাছে যেতে মনস্থ করলেন ।
বনের মধ্যে ঋষিদের আশ্রমসকল দেখতে দেখতে তারা এক মুনির সন্ধান পেলেন । তিনি দীর্ঘায়ু, নীরােগ, নিরাহারে ঘাের তপস্যায় মগ্ন ছিলেন । সর্বশাস্ত্র বিশারদ ধর্মতত্ত্বজ্ঞ ও ত্রিকালজ্ঞ সেই মহামুনি লােমশ নামে পরিচিত ।
আরো জানুনঃ শ্রাদ্ধ কি এবং কেন করা হয় ?
ব্রহ্মার এক কল্প অতিবাহিত হলে মুনিবরের গায়ের একটি লোম পরিত্যক্ত হতো । এই কারণে এই মহামুনির নাম লােমশ । তাকে দেখে সকলেই ধন্য হলেন । তারা পরস্পর বলতে লাগলেন যে, আমাদের বহু জন্মের সৌভাগ্যের ফলে আজ আমরা এই মুনিবরের সাক্ষাৎ লাভ করলাম । তারপর ঋষিবর তাদের সম্বােধন করে বললেন— কি কারণে আপনারা এখানে এসেছেন এবং কেনই বা আমার এত প্রশংসা করছেন, তা স্পষ্ট করে বলুন । আপনাদের যাতে মঙ্গল হয়, আমি নিশ্চয়ই তার চেষ্টা করব ।
ব্রাহ্মণগণ বললেন—হে ঋষিবর ! আমরা যে উদ্দেশ্যে এখানে এসেছি আপনি তা কৃপা করে শুনুন । এ পৃথিবীতে আপনার মতাে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি আর কোথাও নেই । মহীজিৎ নামে এক রাজা নিঃসন্তান হওয়ায় অতি দুঃখে দিনযাপন করছে ।
আমরা তার প্রজা, তিনি আমাদেরকে পুত্রের মতাে পালন করেন । কিন্তু তিনি পুত্রহীন বলে আমরাও সবাই মর্মাহত । তার দুঃখ দূর করতে আমরা এই বনে প্রবেশ করেছি । হে ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠ ! রাজা যাতে পুত্রের মুখ দর্শন করতে পারেন, কৃপা করে তার কোন উপায় আমাদের বলুন ।
তাদের কথা শুনে মুনিবর ধ্যানমগ্ন হলেন । কিছু সময় পরে রাজার পূর্বজন্মবৃত্তান্ত বলতে লাগলেন । এই রাজা পূর্বজন্মে এক দরিদ্র বৈশ্য ছিলেন । একবার তিনি একটি অন্যায় কার্য করে ফেলেন । ব্যবসা করবার জন্য তিনি এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়াত করতেন । এক সময় জৈষ্ঠ্য মাসে শুক্লপক্ষের দশমীর দিনে কোথাও যাওয়ার পথে তিনি অত্যন্ত তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন । গ্রাম প্রান্তে একটি জলাশয় তিনি দেখতে পান । সেখানে জলপানের জন্য যান ।
একটি গাভী ও তার বাছুর সেখানে জলপান করছিল । তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে তিনি নিজেই জলপান করতে লাগলেন । এই পাপকর্মের ফলে তিনি পুত্ৰসুখে বঞ্চিত হয়েছেন । কিন্তু পূর্বজন্মের কোন পুণ্যের ফলে তিনি এইরকম নিষ্কণ্টক রাজ্য লাভ করেছেন ।
হে মুনিবর ! শাস্ত্রে আছে যে পুণ্য দ্বারা পাপক্ষয় হয় । তাই আপনি এমন একটি পুণ্যব্রতের উপদেশ করুন যাতে তার পার পাপ দূর হয় এবং আপনার অনুগ্রহে তিনি পুত্রসন্তান লাভ করতে পারেন । লােমশ মুনি বললেন শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের পবিত্রারােপণী একাদশী ব্রত অভিষ্ট ফল প্রদান করে । আপনারা যথাবিধি তা সকলে পালন করুন ।
লােমশ মুনির উপদেশ শুনে আনন্দ চিত্তে গৃহে ফিরে তারা রাজাকে সে সকল কথা জানালেন । তারপর সকলে মিলে মুনির নির্দেশ অনুসারে ব্রত পালন করলেন । তাদের সকলের পুণ্যফল রাজাকে প্রদান করলেন । সেই পুণ্য প্রভাবে রাজমহিষী গর্ভবতী হলেন। উপযুক্ত সময়ে বলিষ্ঠ, সর্বাঙ্গসুন্দর এক পুত্রসন্তানের জন্ম দান করলেন ।
ভবিষ্যপুরাণে এই মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে । এই ব্রত মাহাত্ম্য যিনি পাঠ বা শ্রবণ করবেন তিনি সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হবেন এবং পুত্ৰসুখ ভােগ করে অবশেষে দিব্যধাম প্রাপ্ত হবেন ।