শয়ন একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য
মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন, হে কৃষ্ণ । আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি ? এর মহিমাই বা কি ? তা আমাকে কৃপা করে বলুন ।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন, ব্রহ্মা এই একাদশী সম্পর্কে দেবর্ষি নারদকে যা বলেছিলেন আমি সেই আশ্চর্যজনক কথা আপনাকে বলছি ।
আরো জানুনঃ দ্রৌপদী সম্পর্কে ১০ টি গোপন এবং অজানা তথ্য!!!
শ্রীব্রহ্মা বললেন-হে নারদ ! এ সংসারে একাদশীর মত পবিত্র আর কোন ব্রত নেই । সকল পাপ বিনাশের জন্য বিষ্ণু ব্রত পালন করা একান্ত আবশ্যক । যে ব্যক্তি এই প্রকার সকল অভিষ্ট ফলদাতা একাদশী ব্রত না করে তাকে নরকগামী হতে হয় । আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের এই একাদশী 'শয়ন' নামে বিখ্যাত । শ্রীভগবান ঋষিকেশের জন্য এই ব্রত পালন করতে হয় । এই ব্রতের সম্বন্ধে এক মঙ্গলময় পৌরাণিক কাহিনী আছে । আমি এখন তা আপনার নিকট বলছি ।
বহু বছর পূর্বে সূর্যবংশে মান্ধাতা নামে একজন রাজর্ষি ছিলেন । তিনি ছিলেন সত্যপ্রতিজ্ঞ এবং প্রতাপশালী রাজা । প্রজাদেরকে তিনি নিজের সন্তানের মতাে প্রতিপালন করতেন । সেই রাজ্যে কোনরকম দুঃখ, রােগ-ব্যাধি, দুর্ভিক্ষ, খাদ্যাভাব অথবা কোন অন্যায় আচরণ ছিল না । এইভাবে বহুদিন অতিবাহিত হল । কিন্তু একসময় হঠাৎ দৈবদুর্বিপাকে ক্রমাগত তিনবছর সে রাজ্যে কোন বৃষ্টি হলো না । দুর্ভিক্ষের ফলে সেখানে দেবতাদের উপশ্যে দানমন্ত্রের 'স্বাহা’ ‘স্বধা' ইত্যাদি শব্দও বন্ধ হয়ে গেল । এমনকি বেদপাঠও ক্রমশ বন্ধ হল ।
তখন প্রজারা রাজার কাছে এসে বলতে লাগল মহারাজ দয়া করে আমাদের কথা শুনুন । শাস্ত্রে জলকে নার বলা হয় আর সেই জলে ভগবানের অয়ন অর্থাৎ নিবাস । তাই ভগবানের এক নাম নারায়ণ ।
মেঘরূপে ভগবান বিষ্ণু সর্বত্র বারিবর্ষণ করেন । সেই বৃষ্টি থেকে অন্ন এবং অন্ন খেয়ে প্রজাগণ জীবন ধারণ করেন । এখন সেই অন্নের অভাবে প্রজারা ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে । অতএব হে মহারাজ আপনি এমন কোন উপায় অবলম্বন করুন যাতে আপনার রাজ্যের শান্তি এবং কল্যাণ সাধন হয় ।
এখানেঃ মহাভারতের যে যোদ্ধা এখনো জীবিত!!!
রাজা মান্ধাতা বললেন, তােমরা ঠিকই বলেছ । অন্ন থেকে প্রজার উদ্ভব । অন্ন থেকেই প্রজার পালন । তাই অন্নের অভাবে প্রজারা বিনষ্ট হয় । আবার রাজার দোষেও রাজ্য নষ্ট হয় । আমি নিজের বুদ্ধিতে আমার নিজের কোন দোষ খুঁজে পাচ্ছি না । তবুও প্রজাদের কল্যাণের জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব ।
তারপর রাজা ব্রহ্মাকে প্রণাম করে সৈন্যসহ বনে গমন করলেন । সেখানে প্রধান প্রধান ঋষিদের আশ্রমে ভ্রমণ করলেন। এভাবে একদিন তিনি ব্রহ্মার পুত্র মহাতেজস্বী ঋষি অঙ্গিরার সাক্ষাৎ লাভ করলেন। তাকে দর্শনমাত্রই রাজা মহানন্দে ঋষির চরণ বন্দনা করলেন । মুনিবর তাকে আশীর্বাদ ও কুশল প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন । রাজা তখন তার বনে আগমনের কারণ সবিস্তারে ঋষির কাছে জানালেন । ঋষি অঙ্গিরা কিছু সময় ধ্যানস্থ থাকার পর বলতে লাগলেন, হে রাজন !
আপনি আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের শয়ন নামে প্রসিদ্ধ একাদশী ব্রত পালন করুন । এই ব্রতের প্রভাবে নিশ্চয়ই রাজ্যে বৃষ্টি হবে । এই একাদশী সর্বসিদ্ধি দাত্রী এবং সর্ব উপদ্রব নাশকারিনী । হে রাজন ! প্রজা ও পরিবারবর্গ সহ আপনি এই ব্রত পালন করুন ।
মুনিবরের কথা শুনে রাজা নিজের প্রাসাদে ফিরে এলেন । আষাঢ় মাস উপস্থিত হলে রাজ্যের সকল প্রজা রাজার সাথে এই একাদশী - ব্রতের অনুষ্ঠান করলেন । ব্রত প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হল। কিছুকালের মধ্যেই অন্নাভাব দূর হল । ভগবান হৃষিকেশের কৃপায় প্রজাগণ সুখী হল ।
এ কারণে সুখ ও মুক্তি প্রদানকারী এই উত্তম ব্রত পালন করা সকলেরই অবশ্য কর্তব্য । ভবিষ্যপুরাণে যুধিষ্ঠির-শ্রীকৃষ্ণ তথা নারদ-ব্রহ্মা সংবাদ রূপে শয়ন একাদশীর মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে ।