জ্যৈষ্ঠ শুক্ল পক্ষের এই নির্জলা একাদশী ব্রত সম্পর্কে ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে শ্রীভীমসেন--ব্যাসসংবাদে বর্ণিত হয়েছে ।
মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন, হে জনার্দন ! আমি অপরা একাদশীর সমস্ত মাহাত্ম্য শ্রবণ করলাম এখন জ্যৈষ্ঠ শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম ও মাহাত্ম্য কৃপাপূর্বক আমার কাছে বর্ণনা করুন ।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন, এই একাদশীর কথা মহর্ষি ব্যাসদেব বর্ণনা করবেন । কেননা তিনি সর্বশাস্ত্রের অর্থ ও তত্ত্ব পূর্ণরূপে জানেন । রাজা যুধিষ্ঠির ব্যাসদেবকে বললেন--হে মহর্ষি দ্বৈপায়ন ! আমি মানুষের লৌকিক ধর্ম এবং জ্ঞানকাণ্ডের বিষয়ে অনেক শ্রবণ করেছি । আপনি যথাযথভাবে ভক্তিবিষয়িনী কিছু ধর্মকথা এখন আমায় বর্ণনা করুন ।
আরো জানুনঃ একাদশী পারণ মন্ত্র | পারন কিভাবে করতে হয় ?
শ্রীব্যাসদেব বললেন- হে মহারাজ ! তুমি যেসব ধর্মকথা শুনেছ । এই কলিযুগের মানুষের পক্ষে সে সমস্ত পালন করা অত্যন্ত কঠিন । যা সুখে, সামান্য খরচে, অল্প কষ্টে সম্পাদন করা যায় অথচ মহাফল প্রদান করে এবং সমস্ত শাস্ত্রের সারস্বরূপ সেই ধর্মই কলিযুগে মানুষের পক্ষে করা শ্রেয় । সেই ধর্মকথাই এখন আপনার কাছে বলছি ।
উভয় পক্ষের একাদশী দিনে ভােজন না করে উপবাস ব্রত করবে । দ্বাদশীর দিনে স্নান করে শুচিশুদ্ধ হয়ে নিত্যকৃত্য সমাপনের পর শ্রীকৃষ্ণের অর্চন করবে । এরপর ব্রাহ্মণদেরকে প্রসাদ ভােজন করাবে । অশৌচাদিতেও এই ব্রত কখনও ত্যাগ করবে না । যে সকল ব্যক্তি । স্বর্গে যেতে চায়, তাদের সারা জীবন এই ব্রত পালন করা উচিত । পাপকর্মে রত ও ধর্মহীন ব্যক্তিরাও যদি এই একাদশী দিনে ভােজন করে, তবে তারা যমযাতনা থেকে রক্ষা পায় ।
শ্রীব্যাসদেবের এসব কথা শুনে গদাধর ভীমসেন অশ্বত্থ পাতার মতাে কাঁপতে কাঁপতে বলতে লাগলেন—হে মহাবুদ্ধি পিতামহ ! মাতা কুন্তী, দ্রৌপদী, ভ্রাতা যুধিষ্ঠির, অর্জুন, নকুল ও সহদেব এরা কেউই একাদশীর দিনে ভােজন করে না । আমাকেও অন্ন গ্রহণ করতে নিষেধ করে । কিন্তু দুঃসহ ক্ষুধাযন্ত্রণার জন্য আমি উপবাস করতে পারি না ।
ভীমসেনের এরকম কথায় ব্যাসদেব বলতে লাগলেন—যদি স্বর্গাদি দিব্যধাম লাভে তােমার একান্ত ইচ্ছা থাকে, তবে উভয় পক্ষের এতাদশীতে ভােজন করবে না ।
তদুত্তরে ভীমসেন বললেন—আমার, নিবেদন এই যে, উপবাস তাে দূরের কথা, দিনে একবার ভােজন করে থাকাও আমার পক্ষে অসম্ভব । কারণ আমার উদরে ‘বৃক’ নামে অগ্নি রয়েছে । ভােজন না করলে কিছুতেই সে শান্ত হয় না । তাই প্রতিটি একাদশী পালনে আমি একেবারেই অপারগ ।
হে মহর্ষি, বছরে একটি মাত্র একাদশী পালন করে যাতে আমি দিব্যধাম লাভ করতে পারি এরকম কোন একাদশীর কথা আমাকে বলুন ।
তখন ব্যাসদেব বললেন—জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে জলপান পর্যন্ত না করে সম্পূর্ণ উপবাস থাকবে । তবে আচমনে দোষ হবে না । ঐদিন অন্নাদি গ্রহণ করলে ব্রত ভঙ্গ হয় ।
একাদশীর দিন সুর্যোদয় থেকে দ্বাদশীর দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত জলপান বর্জন করলে অনায়াসে বারােটি একাদশীর ফল লাভ হয় । বছরের অন্যান্য একাদশী পালনে অজান্তে যদি কখনও ব্রতভঙ্গ হয়ে যায়, তাহলে এই একটি মাত্র একাদশী পালনে সেই সব দোষ দূর হয় । দ্বাদশীর দিনে ব্রাহ্মমুহূর্তে স্নানাদিকার্য সমাপ্ত করে শ্রীহরির পূজা করবে । সদাচারী ব্রাহ্মণদের বস্ত্রাদি দানসহ ভােজন করিয়ে আত্মীয়স্বজন সঙ্গে নিজে ভােজন করবে । এরূপ একাদশী ব্রত পালনে যে প্রকার পুণ্য সঞ্চিত হয়, এখন তা শ্রবণ কর ।
সারা বছরের সমস্ত একাদশীর ফলই এই একটি মাত্র ব্রত উপবাসে লাভ করা যায় । শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্মধারী ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাকে বলেছেন, “বৈদিক ও লৌকিক সমস্ত ধর্ম পরিত্যাগ করে যারা একমাত্র আমার শরণাপন্ন হয়ে এই নির্জলা একাদশী ব্রত পালন করে তারা সর্বপাপ মুক্ত হয় ।
বিশেষত কলিযুগে ধন-সম্পদ দানের মাধ্যমে সদগতি বা স্মার্ত সংস্কারের মাধ্যমেও যথার্থ কল্যাণ লাভ হয় না । কলিযুগে দ্রব্যশুদ্ধি নেই । কলিতে শাস্ত্রোক্ত সংস্কার বিশুদ্ধ হয় না । তাই বৈদিক ধর্ম কখনও সুসম্পন্ন হতে পারে না ।
হে ভীমসেন ! তােমাকে বহু কথা বলার আর প্রয়োজন কি ? তুমি উভয় পক্ষের একাদশীতে ভােজন করবে না । যদি তাতে অসমর্থ হও তবে জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীতে অবশ্যই নির্জলা উপবাস করবে । এই একাদশী ব্রত ধনধান্য ও পুণ্যদায়িনী । যমদূতগণ এই ব্রত পালনকারীকে মৃত্যুর পরও স্পর্শ করতে পারে না । পক্ষান্তরে বিষ্ণুদূতগণ তাকে বিষ্ণুলােকে নিয়ে যান ।
শ্রীভীমসেন ঐদিন থেকে নির্জলা একাদশী পালন করতে থাকায় এই একাদশী ‘পান্ডবা নির্জলা বা ভীমসেনী একাদশী' নামেও প্রসিদ্ধ হয়েছে । এই নির্জলা একাদশীতে পবিত্র তীর্থে স্নান, দান, তপ, কীর্তন ইত্যাদি যা কিছু মানুষ করে তা অক্ষয় হয়ে যায় । যে ব্যক্তি ভক্তিসহকারে এই একাদশী মাহাত্ম্য পাঠ বা পান করেন তিনি বৈকুণ্ঠধাম প্রাপ্ত হন ।
এখানেঃ সফলা একাদশীর মাহাত্ম্য
হরে কৃষ্ণ ❤️
ReplyDeleteসবগুলো একাদশীর তালিকা দিলে উপকৃত হতাম 🙏🏻
সবগুলো একাদশীর তালিকা ইতিমধ্যেই আমাদের ওয়েবসাইটে পাবলিশ করা হয়েছে ।
Deleteআপনি উপরে দেয়া সার্চবক্সে গিয়ে একাদশী তালিকা ২০২২ লিখে সার্চ করুন । সবগুলোর তালিকা পারনের সময়সহ পেয়ে যাবেন 🙏🏻