হিন্দুদের ঈশ্বর কে ?
ঋকবেদে বলা আছে,
ঈশ্বর একমোদ্বিতীয়ম-- অর্থাৎ, ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় ।
একং সদ্ বিপ্রা বহুধা বদন্তি- ( ঋকবেদ ১/৬৪/৪৬) ।
অর্থাৎ, সেই এক ঈশ্বরকে পন্ডিতগণ বহুনামে ডেকে থাকেন ।
একং সন্তং বহুধন কল্পায়ন্তি ( ঋকবেদ ১/১১৪/৫)
অর্থাৎ, সেই এক ঈশ্বরকে বহুরূপে কল্পনা করা হয়েছে ।
"ন দ্বিতীয় ন তৃতীয়, চতুর্থ ন পুচ্যতে""
"ন পঞ্চম ন ষষ্ঠ, সপ্ত্য ন পুচ্যতে।।
"ন অষ্টম ন নবম, দশমো ন পুচ্যতে "
"য এতং দেব মেক বৃতং বেদ।। ( অথর্ববেদ ১৪/৪/২)
অর্থাৎ, পরমাত্মা এক । তিনি ছাড়া কেউ ২য়, ৩য় বা ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ বা ৭ম, ৮ম, ৯ম বা ১০ম বলে অভিহিত আর কেউ নেই ।
উপরের শ্লোকে আগেই বলা হয়েছে, ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় । তাহলে ঈশ্বর কে- ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, রাম নাকি শ্রীকৃষ্ণ ?
আরো জানুনঃ হিন্দুধর্মের প্রথম মানব কে ছিলেন ?
ঈশ্বরের নির্দিষ্ট কোনো রূপ নেই । ঈশ্বর যখন সৃষ্টির কাজে নিয়োজিত থাকেন তখন তিনি ব্রহ্মা । ঈশ্বর যখন সৃষ্টির পালনের কাজে নিয়োজিত থাকেন তখন তিনি বিষ্ণু । ঈশ্বর যখন সংহার বা ধ্বংসের কাজে নিয়োজিত থাকেন তখন তিনি শিব । ঈশ্বর যখন দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করার জন্য পৃথিবীতে আবতারন করেন তখন তিনি অবতার । ঈশ্বর যখন নিজে কোন বিশেষ গুন বা ক্ষমতা নিয়ে বিশেষ কোনো রূপ ধারণ করে সাকার হয়ে উঠেন তখন তিনি দেবতা ।
ঈশ্বর জ্ঞানীর কাছে ব্রহ্মা, যোগীর কাছে পরমাত্মা আর ভক্তের কাছে ভগবান ।
আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে ঈশ্বর হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ । কারণ শ্রীকৃষ্ণ যে ভগবান বা ঈশ্বর তা গীতায় উল্লেখ করা আছে । গীতার ১০ অধ্যায়ের ২০-৩৫ শ্লোকের মধ্যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন -আমি স্রষ্টার মধ্যে ব্রহ্মা, আদিত্যদের মধ্যে আমি বিষ্ণু, রুদ্রের আমি আমি শিব । আমিই রাম, দেবতাদের মধ্যে ইন্দ্র, সেনাপতিদের মধ্যে কার্তিক ।
এখানেঃ একাদশী তালিকা ও পারণের সময়সূচি ২০২২
এতে বুঝাই যাচ্ছে, সবই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, তাই আমাদের কাছে ঈশ্বর হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ । মনে রাখতে হবে, ঈশ্বরের এক একটি গুণ বা ক্ষমতাকে এক একটি ঈশ্বর বলা হয় । তাই বলে তিনি আলাদা নন ।
আমরা যদি ইসলাম ধর্মের দিকে তাকাই তবে দেখতে পাই, সেখানে আল্লাহর ৯৯ টি নাম উল্লেখ করা আছে । এর মধ্যে যেকোনো একটি নামে ডাকলেই আল্লাহকে ডাকা হয়, আমাদের হিন্দুদের মধ্যেও তাই । ঈশ্বরের সহস্র নামের মধ্যে যেকোনো একটি নামে ডাকলেই ঈশ্বরকে ডাকা হয় । কিন্তু আজকাল আমরা ঈশ্বরকে আলাদা করে ফেলেছি । আমরা ঈশ্বরের এক ভক্ত হয়ে আরেক ভক্তকে দেখতে পারি না বরং অবহেলা করি । এর কারণ আমরা নিজেদের ধর্ম সম্পর্কে নিজেরাই জানি না বরং হিংসা করি ।
ঈশ্বর কি নিরাকার নাকি সাকার ?
ঈশ্বর নিরাকার । ঈশ্বর সর্বশক্তিমান । ঈশ্বর সর্বশক্তিমান হওয়ার কারণে তিনি যেকোনো সময় যেকোনো আকার বা রূপ ধারণ করে সাকার হয়ে উঠতে পারেন । সেই ক্ষেত্রে বলা যায়, ঈশ্বর নিরাকার ও সাকার দুইই ।
হর হর মহাদেব ❤️