চড়ক পূজা ২০২৫
চড়ক পূজা কেন করা হয়
আগামী চৈত্রমাসে শুরু হবে চড়ক পূজা । তার আগে জেনে নিন চড়ক পূজার ইতিবৃত্ত.......
পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকোৎসব চড়ক পূজা । চৈত্রের শেষ দিনে অর্থাৎ সংক্রান্তির দিন এই পূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং বৈশাখের প্রথম দু-তিন দিনব্যাপী এ পূজার উৎসব চলে । এটি চৈত্র মাসে পালিত সনাতনী দেবতা শিবের গাজন উৎসবের একটি অঙ্গ। উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে, যা চড়ক সংক্রান্তির মেলা নামে পরিচিত ।
চড়ক পূজার প্রচলন
লিঙ্গপুরাণ, বৃহদ্ধর্মপুরাণ এবং ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে চৈত্র মাসে শিব আরাধনা প্রসঙ্গে নৃত্যগীতাদি উৎসবের উল্লেখ থাকলেও চড়ক পূজার উল্লেখ নেই । পূর্ণ পঞ্চদশ-ষোড়শ শতাব্দীতে রচিত গোবিন্দানন্দের বর্ষক্রিয়াকৌমুদী ও রঘুনন্দনের তিথিতত্ত্বেও এ পূজার উল্লেখ পাওয়া যায় না । তবে প্রাচীনকালে এ উৎসব প্রচলিত ছিল পাশুপত সম্প্রদায়ের মধ্যে। উচ্চ স্তরের লোকদের মধ্যে এ অনুষ্ঠানের প্রচলন খুব প্রাচীন নয় । জনশ্রুতি রয়েছে, ১৪৮৫ খ্রিস্টাব্দে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা এই পূজা প্রথম শুরু করেন ।
গম্ভীরাপূজা বা শিবের গাজন এই চড়কপূজারই রকমফের । চড়ক পূজা চৈত্রসংক্রান্তিতে অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষ দিবসে পালিত হয় । এ পূজার বিশেষ অঙ্গের নাম নীলপূজা । পূজার আগের দিন চড়ক গাছটিকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয় । এতে জলভরা একটি পাত্রে শিবের প্রতীক শিবলিঙ্গ বা সিঁদুরমথিত লম্বা কাঠের তক্তা ('শিবের পাটা') রাখা হয়, যা পূজারিদের কাছে ‘বুড়োশিব’ নামে পরিচিত । পতিত ব্রাহ্মণ এ পূজার পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন । পূজার বিশেষ বিশেষ অঙ্গ হলো কুমিরের পূজা, জ্বলন্ত অঙ্গারের ওপর হাঁটা, কাঁটা আর ছুঁড়ির ওপর লাফানো, বাণফোঁড়া, শিবের বিয়ে, অগ্নিনৃত্য, চড়কগাছে দোলা এবং দানো-বারনো বা হাজরা পূজা করা ।
এসব পূজার মূলে রয়েছে ভূতপ্রেত ও পুনর্জন্মবাদের ওপর বিশ্বাস । এর বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রাচীন কৌমসমাজে প্রচলিত নরবলির অনুরূপ । পূজার উৎসবে বহু প্রকারের দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ বলে বিবেচিত হয় । চড়কগাছে ভক্ত্যা বা সন্ন্যাসীকে লোহার হুড়কা দিয়ে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘোরানো হয় । তার পিঠে, হাতে, পায়ে, জিহ্বায় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে বাণ শলাকা বিদ্ধ করা হয় । কখনো কখনো জ্বলন্ত লোহার শলাকা তার গায়ে ফুঁড়ে দেওয়া হয় । ১৮৬৩ সালে ব্রিটিশ সরকার আইন করে এ নিয়ম বন্ধ করলেও গ্রামের সাধারণ লোকের মধ্যে এখনো তা প্রচলিত আছে ।
পূজার উদ্যোক্তারা কয়েকজনের একটি দল নিয়ে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়ায় । দলে থাকে একজন শিব ও দুজন সখী । একজনকে সাজানো হয় লম্বা লেজ দিয়ে, তার মাথায় থাকে উজ্জ্বল লাল রঙের ফুল । সখীদের পায়ে থাকে ঘুঙুর। তাদের সঙ্গে থাকে ঢোল-কাঁসরসহ বাদকদল । সখীরা গান ও বাজনার তালে তালে না চে। এদেরকে দেল বা নীল পাগলের দলও বলা হয় । এরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গাজনের গান গায় এবং নাচ-গান পরিবেশন করে । বিনিময়ে দান হিসেবে যা কিছু পাওয়া যায় তা দিয়ে হয় পূজা ।
ভারতের মহারাষ্ট্রের বগাড় উৎসব, অন্ধ্রপ্রদেশের সিরিমনু উৎসব কিংবা মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত প্রাচীন ড্যান্সা ডে লো ভোলাডোরস্ উৎসব বাংলার গাজন উৎসবের চড়ক পূজার অনুরূপ । উক্ত উৎসব বা অনুষ্ঠানগুলিতেও ভক্ত বা অনুষ্ঠানকারীকে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘোরানো হয় পবিত্র (পূজিত) গাছে ।
আরও জানুন
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম তারিখ কত ছিল ?
পূজায় মঙ্গল ঘট স্থাপন করার কারণ কি ?
হিন্দুরা কেন পূজা করার পর প্রতিমা বিসর্জন দেয় ?
হিন্দু ধর্মের প্রথম মানব কে ছিলেন ?
মহাভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ ১০ জন যোদ্ধার তালিকা
OUR FB PAGE LINK