হিন্দুধর্ম ধ্বংসের কারণ কি ?
সনাতন ধর্মে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম দর্শনযুক্ত ধর্মগ্রন্থ থাকা স্বত্তেও এই জাতি-ধর্ম দুর্বল ও বিলুপ্তির পথে কেন ?
1. প্রথমত আমাদের সনাতন ধর্মগ্রন্থ হতে আমরা দূরে বিধায় ধর্মগ্রন্থও আমাদের হতে দূরে অবস্থান করছে ।
2. আমাদের পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে উদাসীন । শুধু পিতা-মাতারাই নয় । সমগ্র হিন্দু জাতীই এ বিষয়ে উদাসীন ।
3. আমাদের ধর্মগ্রন্থে যে জীবন-যাপন এবং শিক্ষা-দীক্ষার পথনির্দেশিকা আছে । সেটি আমরা না মেনে উপেক্ষা করে চলি ।
4. আমাদের পবিত্র বেদে উল্লেখ্য আছে,যে জাতীর রাজকীয় গুণ নেই । সে জাতী যত জ্ঞানীই হোক,সংখ্যায় যতই বেশি থাকুক,তাদের কাছে রাজক্ষমতা থাকলেও তা হারিয়ে যায় এবং ভবিষ্যতেও রাজক্ষমতা পেতে পারে না । কারন তাদের রাজকীয় গুণ নেই!
আরো জানুনঃ হিন্দুরা কেন মূর্তিপূজা করে ?
বহু রাজকীয় গুণ আছে তন্মদ্ধে দু একটি তুলে ধরা হলো:
যেমন কোন পরিবারে পাঁচ-সাতজন ভাই বোন থাকে ।তাদের ভিতর টুকটাক স্বার্থ, কিছু দ্বিধা-দ্বন্দ, মনোমালিন্য, এই নিয়ে কিছু ঝগড়াও বাধে । এমতাবস্থায় কোন ভাই অথবা বোন কোথাও শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হলে সমস্ত ভাই-বোনেরা নিজেদের বিভেদ ভুলে গিয়ে শত্রুর উপর সিংহের মতো ঝাপিয়ে পরে শত্রুকে চরম শিক্ষা দিয়ে দেয় । এই কার্য শেষ হলে ভাই বোনেরা পূর্বের স্ব স্ব স্থানে ফিরে আসে । ইহা একটি রাজকীয় গুণ । অর্থাৎ একতা !
আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে অনেকেই আছে অতি ধনী এবং অতি দরিদ্র । সমস্ত আত্মীয়-স্বজনদেরই উচিত্ একে অপরের পাশে দাড়ানো । ধনী দরিদ্রের বিভেদ ভুলে গিয়ে । এটিও একটি রাজকীয় গুণ ।
যেমন আমরা ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করি । ঐ নেতা যদি আমাদের জাতি-ধর্মের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে বা করার চেষ্টা করে । তাহলে তাকে সকলে সম্মিলিতভাবে ক্ষমতা থেকে বহিষ্কৃত করা উচিত্ । যদি তার কাছে থেকে কোন ব্যক্তি স্বার্থ পেয়েও থাকি,তবে জাতি-ধর্মের স্বার্থে ব্যক্তি স্বার্থ বিসর্জন দিতে হবে । ইহাও পবিত্র বেদে বর্ণিত একটি রাজকীয় গুণ । তবে ভারতীয় মেকি হিন্দুদের মধ্যে এর বিপরীত ভাব লক্ষ করা যায় । বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে ।
এই যে হিন্দু জাতীর ভিতর একটি কুসংস্কার চলছে । যার নাম বংশতন্ত্র বা পরিবারতন্ত্র ব্রাহ্মণ প্রথা । যেমন: অমুক ব্রাহ্মণের ছেলে ধর্ম বিষয়ে বুঝুক না বুঝুক সে ব্রাহ্মণ । এমনিভাবে তার ছেলেও ব্রাহ্মণ ।
এখন ব্রাহ্মণ সম্বন্ধে কিছু কথা তুলে ধরছি:
আমাদের পবিত্র বেদে বর্ণিত রয়েছে ।
জন্ম জায়তে শূদ্রঃ
সংস্কারঃ দ্বিজ উচ্চতে
বেদঃ পঠনাৎ ভবেত বিপ্র
ব্রহ্ম জ্ঞানেতী ইতি ব্রাহ্মণ।
অর্থাত্ জন্ম মাত্র আমরা সকলেই শুদ্র । যখন তার উপনয়ন বা দর্শনচক্ষু খুলবে,ভালো-মন্দ ও ধর্ম সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ হবে,তখন সে দ্বিজ । বেদের জ্ঞান লাভ করলে তখন সে বিপ্র হয় । যখন সে বেদের সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করে, চুলছেড়া বিশ্লেষনের মাধ্যমে নিজের জীবন চালিত করে তখন সে ব্রাহ্মণ ।
বেদে আরো বর্ণিত আছে: লিঙ্গ শরীরের ব্রাহ্মণ ও স্থুল শরীরের ব্রাহ্মণ । এই দুই প্রকারের ব্রাহ্মণ রয়েছে । মুচি, চামার, কুলি, মজুর, কৃষকের কোন সন্তান যদি যোগ্যতাবলে ব্রাহ্মণ হয়, তখন সে স্থুল শরীরের ব্রাহ্মণ ।পরবর্তীতে ঐ ব্রাহ্মণের ছেলেও যদি যোগ্যতাবলে ব্রাহ্মণ হয় । তখন সে লিঙ্গ শরীরের ব্রাহ্মণ । অর্থাত্ কৃষকের ছেলে স্থুল শরীরে ব্রাহ্মণ,আবার কৃষকের নাতিই পরবর্তীতে লিঙ্গ শরীরের ব্রাহ্মণ । আর আমরা (হিন্দুরা) এর বিপরীত বিধান পালন করে চলেছি !
গুরু শিষ্য বিষয়ে কথন : আমাদের পবিত্র গীতা গ্রন্থে আছে । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বারবার আহ্বান করেছেন,যে তুমি কোনো ত্বত্তদর্শী গুরুর স্বরণাপণ্য হও ।এখানে কোনো অযোগ্য,উচু-নিচু জাতিভেদ এবং কোনো বংশতন্ত্র গুরুর কথা তিনি বলেননি । যিনি যোগ্য এবং ত্বত্তদর্শী গুরু,তার কথা বলেছেন । আর আমরা এখন এমন গুরুর স্বরণাপণ্য হই যারা ত্বত্তদর্শী তো নয়ই বরঞ্চ তারা ধর্ম নিয়ে ব্যাবসা শুরু করেছে !
পুরোহিত : পুরোহিত শব্দের সঠিক অর্থ হলো "পুরস" অর্থ সম্মুখে আর "হিত" অর্থ অবস্থান ।
মুচি, চামার, ডোম, কৃষক যে কারোর সন্তান ধর্মীয় পান্ডিত্য অর্জন করে সাধারন লোকের ধর্মীয় মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানাদি পরিচালনা বা পৌরহিত্য অর্জন করতে পারেন । এখানে বংশতন্ত্র পৌরহিতের সন্তান হতেই হবে এমন কোন কথা নেই !
এই যে ব্রাহ্মণ হতে পৌরহিত পর্যন্ত যে বর্ণনা করা হলো ।
***তাতে নিজেকে প্রশ্ন করুন । আমরা শাস্ত্রের নির্দেশিত পথে চলছি না বিপরীতে ?
যদি বিপরীতে চলি তাহলে আমাদের জাতি-ধর্ম ধংস বা বিলুপ্তির পথে যাবে না কেন ???
ভাবুন, ভাবা প্র্যাকটিস করুন!!