10 Unknown Facts About Draupadi
মহাভারত(caps) সংস্কৃত সাহিত্যে "ইতিহাস" এর অধীনে শ্রেণীবদ্ধ হিন্দুদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য । এটি কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের একটি মহাকাব্যিক ইতিহাস তুলে ধরে । এই মহাকাব্যে অনেক চরিত্র রয়েছে যা এখনও অনেকের কাছে রহস্য । এরকমই একটি চরিত্র ছিল দ্রৌপদী । যার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার কোন প্রয়োজন নেই । মহাভারত নামটি আসলেই যাজ্ঞসেনী দ্রৌপদীর নাম আসবেই ।
মহাভারতের বীর রাজকুমারী দ্রৌপদী ছিলেন পাঞ্চালের রাজা দ্রপদের কন্যা এবং পাণ্ডবদের স্ত্রী । দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্রের নামগুলো যথাক্রমেঃ প্রতিবিন্ধ্য, সুতসোম, শ্রুতকর্মা, শতানিক এবং শ্রুতসেন ।
1. দ্রৌপদীর জন্ম
কথিত আছে প্রতিশোধ থেকেই দ্রৌপদীর জন্ম হয়েছিল ।পাঞ্চালের রাজা দ্রুপদ দ্রোণের শিষ্য পাণ্ডব রাজপুত্র অর্জুনের কাছে পরাজিত হন, দ্রোণ তখন পরাজিত অবস্থায় তার রাজ্যের অর্ধেক অধিকার করেছিলেন । প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে, রাজা দ্রৌপদ তাকে আশীর্বাদ হিসেবে পাওয়ার জন্য একটি যজ্ঞের আয়োজন করেন । দ্রৌপদী তার সহোদর ধৃষ্টদ্যুম্নের পর যজ্ঞের আগুন থেকে কৃষ্ণবর্ণের অপরূপ সুন্দরী যুবতী রূপে আবির্ভূত হন । যখন তিনি অগ্নি থেকে আবির্ভূত হন, তখন একটি দৈববাণী হয়েছিল । দৈববাণীটি ছিলো এমন; যে তিনি ভবিষ্যতে ভারতবর্ষে ধর্মের একটি বড় পরিবর্তন আনবেন ।দ্রৌপদী দ্রুপদের অবাঞ্ছিত সন্তান ছিলেন । মায়ের গর্ভ থেকে তার জন্ম হয়নি ।
আরো জানুনঃ ভীষ্ম ক্ষত্রিয় হয়েও কিভাবে পরশুরামের শিষ্য হলেন ?
2. দ্রৌপদীর বিভিন্ন নাম
দ্রৌপদী মহাভারতের অন্যতম প্রধান চরিত্র । অন্যান্য মহাকাব্যিক চরিত্রের মতো, তিনি বিভিন্ন নামে পরিচিত এবং তার প্রতিটি নাম তার বিভিন্ন গুণাবলীকে সংজ্ঞায়িত করে ।দ্রৌপদী - রাজা দ্রুপদ কন্যা
পাঞ্চালী - পাঞ্চাল দেশের রাজকুমারী
পারশতী - প্রীশতার নাতনী
যাজ্ঞসেনী – যজ্ঞের অগ্নি থেকে জন্ম
সায়রান্ধ্রী – একজন বিশেষজ্ঞ দাসী
নিত্যযুবনী - যিনি সারাজীবন যুবতী থাকেন অর্থাৎ কখনও বৃদ্ধ হন না ।
মালিনী - যিনি মালা তৈরি করেন ।
কৃষ্ণা - এটি তার তার শরীরের গাঢ় কালো রঙ এবং বিশুদ্ধ ত্বকের প্রতিনিধিত্ব করে, বিশুদ্ধতা, সম্মান এবং রাজত্ব বিকিরণ করে ।
আরো জানুনঃ শকুনি মামা সম্পর্কে ৮ টি আশ্চর্যজনক তথ্য, যা আপনি আগে জানতেন না!
3. শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন দ্রৌপদীর একমাত্র বন্ধু
দ্রৌপদী সর্বদা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে তার সখা বা প্রিয় বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করতেন এবং কৃষ্ণ তাকে সখী বলে সম্বোধন করতেন । এটি দ্রৌপদী এবং কৃষ্ণের মধ্যে বিদ্যমান আধ্যাত্মিক বন্ধনের প্রতীক । শ্রীকৃষ্ণই তার একমাত্র বন্ধু, যিনি তার ব্যক্তিত্বকে বৈধতা দিয়েছিলেন এবং প্রতিবার যখন তিনি নিজেকে কঠিন পরিস্থিতিতে খুঁজে পেতেন, তাকে উদ্ধার করতে আসতেন । হ্যা, ইনিই হলেন শ্রীকৃষ্ণ, যার ঐশ্বরিক উপস্থিতি দ্রৌপদী তার জীবনে ক্রমাগত অনুভব করেছিলেন ।
আরো পড়ুনঃ মহাভারতের যে যোদ্ধা এখনো জীবিত !
4. দ্রৌপদীর বিবাহ
দ্রৌপদী ছিলেন অত্যন্ত সাহসী এবং অসাধারণ সুন্দরী ।রাজা দ্রুপদ তার কন্যার জন্য একটি স্বয়ম্বর সভার আয়োজন করেছিলেন যেখানে তিনি উপস্থিত প্রতিটি রাজাদের জন্য একটি শর্ত দিয়েছিলেন । "দ্রৌপদী তাকেই বিবাহমাল্য দেবে যে রাজপুত্রকে বিবাহ করবে যে জলে প্রতিবিম্ব দেখে উপরে ঘূর্ণায়মান মাছের চোখ তীর দিয়ে বিদ্ধ করতে পারবে ।অর্জুন তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন । পাণ্ডব রাজকুমার তার ভাই যুধিষ্ঠির ও ভীমের সাথে ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে ছিলেন ।
কর্ণ ব্যাতীত একমাত্র অর্জুনই ছিলেন যিনি মাছের চোখ বিদ্ধ করতে সক্ষম ছিলেন । দ্রৌপদী ইতিমধ্যেই কর্ণকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন কারণ তিনি ছিলেন একজন সারথির পুত্র ।
প্রতিযোগীতায় জয়ী হওয়ার পর ছদ্মবেশী অর্জুন তার ভাই যুধিষ্ঠির এবং ভীমকে নিয়ে উত্তর দিকে চলে যান যেখানে মা কুন্তী তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন । অর্জুন তার মা কুন্তীকে বলেন যে তারা আজকে একটি বিশেষ ভিক্ষা পেয়েছেন । তখন মাতা কুন্তী পেছনে না তাকিয়েই বলে দেন, "যা ভিক্ষা পেয়েছ, পাঁচ ভাই ভাগ করে নাও"
পাঁচ ভাই তাদের মায়ের কথা মেনেছিল । তাই দ্রৌপদীকে পঞ্চপান্ডবদের প্রত্যেককে বিয়ে করতে হয়েছিল ।
দ্রৌপদীর পাঁচ স্বামী হওয়ার পেছনে আরো একটি কারণ আছে । এই লেখাটি থেকে তার বিস্তারিত জানতে পারবেন ।
দ্রৌপদীর পঞ্চস্বামী কেন হয়েছিল ?
5. কৃষ্ণ কুন্তীকে সান্ত্বনা দেন
পাঁচ পাণ্ডবকে বিয়ে করা দ্রৌপদীর নিয়তি ছিল, কুন্তীর দোষ ছিল না । যদিও এতে কুন্তী দুঃখ পায় কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ঘটনাস্থলে এসে কুন্তীকে সান্ত্বনা দেন । তিনি তার পূর্বের জীবনে দ্রৌপদীর তপস্যা সম্পর্কে তাকে বলেন । দ্রৌপদী ভগবান শিবের কাছে এমন একজন স্বামীর জন্য কামনা করেছিলেন যিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণতার প্রতীক, শ্রেষ্ঠ তীরন্দাজ, শক্তিশালী, নমনীয়-ধৈর্যশীল এবং দৃঢ় সংকল্পকারী ।তিনি সত্যিই এই গুণাবলী সম্পন্য একজন মানুষের জন্য কামনা ছিল । কিন্তু যেহেতু সেই সব গুণাবলী সম্পন্ন কাউকে পাওয়া অসম্ভব ছিল । অবশেষে, তিনি তার পরবর্তী জন্মে সেই সমস্ত গুণাবলীসহ পাঁচ স্বামীর ভার্যা হয়েছিলেন ।আরো জানুনঃ মহাভারতের শীর্ষ ১০ জন যোদ্ধার তালিকা
6. পাণ্ডবদের জন্য দ্রৌপদীর শর্ত
দ্রৌপদী একটি শর্তে পাঁচ পাণ্ডবের স্ত্রী হতে রাজি হয়েছিলেন, অর্থাৎ তিনি কখনই অন্য কোনও নারীর সাথে তার সংসার ভাগ করবেন না, যার অর্থ পাণ্ডবদের তাদের অন্য স্ত্রীদের ইন্দ্রপ্রস্থে আনার কোনও অধিকার ছিল না ।
আরো জানুনঃ হিন্দুধর্মে নারীর সম্মান
7. দ্রৌপদী কুকুরদের অভিশাপ দিয়েছিলেন
দ্রৌপদী পাণ্ডবদের আরেকটি শর্ত দিয়েছিলেন যে, একবারে কেবল একজন ভাইকে তার কক্ষে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে ।যে পাণ্ডব তার কক্ষে প্রবেশ করবেন তিনি তার পাদুকা কক্ষের বাইরে রাখবেন । যে এই শর্ত লঙ্ঘন করবে তাকে ১২ বছর নির্বাসনে পাঠানো হবে ।
কিন্তু, একদিন যুধিষ্ঠর যখন দ্রৌপদীর কক্ষে ছিলেন, একটি কুকুর তার পাদুকা চুরি করে নিয়েছিল । তখন অজান্তেই অর্জুন বাইরে কোনো পাদুকা না দেখে দ্রৌপদীর কক্ষে প্রবেশ করেন । তখন তিনি দ্রৌপদীর সাথে তার ভাই যুধিষ্ঠিরকে দেখতে পান । দ্রৌপদীর শর্ত অনুযায়ী অর্জুনকে বনবাসে পাঠানো হয় । বিব্রত দ্রৌপদী তখন কুকুরদের অভিশাপ দিয়ে বলেছিলেন: "সমস্ত পৃথিবী দেখবে তোমাকে প্রকাশ্যে সঙ্গম করতে"
আরো জানুনঃ শ্রীকৃষ্ণের জন্ম তারিখ কত ছিল
8. কালীর অবতার
দক্ষিণ ভারতে একটি প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে যে দ্রৌপদীও নাকি মহাকালীর অবতার ছিলেন । তিনি সমস্ত অহংকারী রাজাদের ধ্বংস করতে ভগবান কৃষ্ণকে সাহায্য করার জন্য জন্মগ্রহণ করেছিলেন । এই কারণেই তারা ভাই-বোন বলে মনে করা হয় । যদিও দ্রৌপদী আগুন থেকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ।
আরো জানুনঃ কল্কি অবতার কে ? কবে আবির্ভূত হবেন ?
9. দ্রৌপদীর অবতার
নারদ পুরাণ এবং বায়ু পুরাণ অনুসারে , তিনি এদের সম্মিলিত অবতার;
দেবী শ্যামলা (ধর্মের স্ত্রী)
ভারতী (বায়ুর স্ত্রী)
শচী (ইন্দ্রের স্ত্রী)
উষা (অশ্বিনের স্ত্রী)
পার্বতী (শিবের স্ত্রী)
10. দ্রৌপদীর মৃত্যু
শ্রীকৃষ্ণ তার নশ্বর দেহ ত্যাগ করার পর, পাণ্ডবরা এই জগতের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন । যুধিষ্ঠির, দ্রৌপদী এবং চার পাণ্ডবরা তাদের জীবন্ত দেহ নিয়ে একটি কুকুর সহ স্বর্গে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন । তারা স্বর্গের দিকে যাত্রা শুরু করে এবং একটানা হেঁটে হিমালয়ের কাছে পৌঁছে যান । এই পর্বত অতিক্রম করার পর তারা 'সুমেরু পর্বত' দেখতে পান । তারা সুমেরু পর্বত অতিক্রম করার সময় দ্রৌপদীর পা ফসকে যায় এবং তিনি পর্বত থেকে পরে মৃত্যুবরণ করেন ।
ভীম যুধিষ্ঠিরকে জিজ্ঞাসা করেন দ্রৌপদী কেন স্বর্গে যাওয়ার মাঝপথেই মারা গেলেন এবং তাদের কেন সাথে স্বর্গে যাত্রা চালিয়ে যেতে পারলেন না ? যুধিষ্ঠির উত্তর দিয়েছিলেন যে "তিনি অর্জুনকে আমাদের চারজনের চেয়ে বেশি ভালবাসতেন" এবং "নিজেকে বিশ্বের সবথেকে সুন্দরী নারী মনে করতেন ।"
ভাই, মহাভারতের সকল পর্বের লিংক দিলে উপকৃত হতাম🙏
ReplyDeletehttps://www.facebook.com/daivabaani
Deleteএই পেইজে ইনবক্স করুন 🙏
লিংক পেয়ে যাবেন