সরস্বতী দেবীর পরিচয় ও পূজা পদ্ধতি
সরস্বতী দেবী বিদ্যা, সংস্কৃতি ও শিল্পকলার দেবী । বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে সরস্বতী বাগদেবী, বিরজা, সারদা, ব্রাহ্মী, শতরূপা, মহাশ্বেতা প্রভৃতি নামেও পরিচিত । সরস্বতীর বর্ণ চন্দ্রের কিরণের মতাে শুভ্র । তাঁর হাতে আছে বীণা ও পুস্তক । রাজহংস তাঁর বাহন । মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে দেবী সরস্বতীর পূজা করা হয় । দেবী সরস্বতী শুভ্র বসন পরিহিতা । সাদা পদ্ম ফুল তার আসন । সাধারণত মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী দেবীর পূজার আয়ােজন করা হয় । সরস্বতী পূজা পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে করা যায় । স্কুল-কলেজ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও সাড়ম্বরে সরস্বতী দেবীর পূজা করা হয় । সাকার রূপে প্রতিমার মাধ্যমে সরস্বতী দেবীর পূজা করা হয় । পূজার পদ্ধতি হিসেবে পূজার মন্ডপ সাজানাে, উপকরণ সংগ্রহ, সংকল্প গ্রহণ, আমন্ত্রণ জানানাে বা প্রাণপ্রতিষ্ঠা, বসার আসন বা সিংহাসন সমর্পণ, পা ধােয়ার জন্য জল সমর্পণ, হাত ধােয়ার জল সমর্পণ, আচমন বা অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রতঙ্গ শুদ্ধকরণ প্রভৃতি সাধারণ পূজাবিধি অনুসারে সম্পাদন করা হয় । সরস্বতী দেবীর পুস্পাঞ্জলির জন্য লাল রঙের ফুলের প্রয়ােজন হয় । পলাশ ফুল সরস্বতী দেবীর প্রিয় ফুল ।
সরস্বতী দেবীর পুস্পাঞ্জলি মন্ত্র :
ওঁ সরস্বত্যৈ নমাে নিত্যং ভদ্রকাল্যৈ নমাে নমঃ ।
বেদ-বেদাঙ্গ-বেদান্ত-বিদ্যাস্থানেভ্যঃ এব চ ।।
এষ সচন্দন-বিল্বপত্র-পুস্পাঞ্জলিঃ ওঁ শ্রীশ্রীসরস্বত্যৈ নমঃ
সরলার্থ : দেবী সরস্বতী, ভদ্রকালীকে নিত্য প্রণাম করি । প্রণাম জানাই বেদ, বেদাঙ্গ, বেদান্ত ইত্যাদি বিদ্যাস্থানকে এবং এ স্থানকে সর্বদা প্রণাম করি । এই চন্দন যুক্ত বিল্বপত্র ও পুষ্পের অঞ্জলি দিয়ে শ্রী শ্রী সরস্বতী দেবীকে প্রণাম জানাই ।
সরস্বতী দেবীর প্রণাম মন্ত্র :
ওঁ সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললােচনে ।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি নমােহস্তুতে ।
সরলার্থ: হে মহীয়সী বিদ্যাদেবী সরস্বতী, পদ্মফুলের মতাে তােমার চক্ষু, তুমি বিশ্বরূপা । হে বিশাল চক্ষুধারণকারী দেবী, তুমি বিদ্যা দান কর । তােমাকে প্রণাম করি ।
সরস্বতী পূজার শিক্ষা ও প্রভাব
সরস্বতী বিদ্যার দেবী । হিন্দুধর্মাবলম্বীরা নিজেদের মনের অজ্ঞতা দূর করা এবং জ্ঞান বিকাশের জন্য বিদ্যাদেবী সরস্বতীর পূজা করেন । এর মধ্য দিয়ে জ্ঞান আহরণের আগ্রহ বেড়ে যায় । সামাজিক দিক থেকে সরস্বতী পূজার গুরুত্ব রয়েছে । স্কুল-কলেজের হিন্দুধর্মাবলম্বী ছাত্রছাত্রীরা এ দিনটি গভীর ভক্তিভরে উদযাপন করে থাকে । বিদ্যাদেবী সরস্বতীর কাছে বিনীতভাবে পুস্পাঞ্জলি অর্পণ করে এবং প্রার্থনা করে মা যেন তাদের বিদ্যা দান করেন । সামাজিক প্রেক্ষাপটে সরস্বতী পূজার মাধ্যমে সমাজের সকল শ্রেণির পূজারীরা বিভিন্ন পূজামন্ডপে পুস্পাঞ্জলি দেয়ার জন্য একত্রিত হন এবং নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আলােচনায় অংশ গ্রহণ করেন যা জ্ঞান বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে । অপরদিকে নিজেদের মধ্যে কুশল বিনিময় করেন এবং এর মাধ্যমে ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধি পায় । এ সুসম্পর্ক সমাজকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতেও সহায়তা করে । আধ্যাত্মিক দিক থেকে সরস্বতী পূজার মাধ্যমে পূজারীদের মধ্যে বিদ্যা অর্জনের একাগ্রতা ও মনােবল অনেকটা বৃদ্ধি পায় এবং তা একজন পূজারীর নৈতিকতাকে যেমন সমৃদ্ধ করে তেমনি ভবিষ্যতের অর্জনের শক্তি যােগায় ।
সবাইকে সরস্বতী পূজার প্রীতি ও শুভেচ্ছা 🙏
ইতি
ত্রিনয়না
05/02/2022
আরও পড়ুন :
❤️
ReplyDelete