গীতা কি বিশ্বজনীন ধর্ম দর্শন ? কিভাবে ?
গীতার ভেতরে ও বাইরে সবই সত্য । ৬৪৫টি সংক্ষিপ্ত শ্লোকে ভগবান তাঁর অনন্ত জ্ঞানের ভাণ্ডারটি উজার করে দিয়েছেন । এতে যেমন মহাবিশ্বের সব জ্ঞান নিহিত, তেমনি বিশ্ব মানবগােষ্ঠীর বহু বিচিত্র মত, পথ ও আচরণের সমন্বিত রূপ এক ধর্মধারায় মিলেছে, যেখানে সাধারণ ব্যবহারিক জগৎ থেকে গভীর দর্শনের অতল প্রদেশ পর্যন্ত যত আপেক্ষিক বৈপরীত্য বা অমিলগুলাে পরিলক্ষিত তা অভিন্ন এক সত্যের সাথে মিলিত হয়েছে ।
গীতা কেন বিশ্বজনীন, তার কয়েকটি ভিত্তি
- গীতা বস্তুবাদী আর আধ্যাত্মবাদী-উভয় প্রকার নর-নারীর জন্যে অনুসরণীয় ।
- প্রতীক, দৃষ্টান্ত বা রূপকের ব্যবহার করে জীবন দর্শনের গভীরতম অর্থটিকে বা পরাসত্যকে আচার সংস্কার বা বিশ্বাস বা পক্ষপাতপূর্ণ অজ্ঞতা বা অজ্ঞানতার তৎকালীন প্রভাব থেকে রক্ষা করে একটি নিরপেক্ষ, সার্বজনীন ও সর্বকালের জীবন বিজ্ঞানে রূপ দেওয়া হয়েছে গীতায় ।
- এটি যেমন প্রতিদিনের অনুসরণীয় বাস্তব জীবনের পরিচালনকারী নির্দেশিকা, তেমনি ঈশ্বর সন্নিধানে নিযুক্ত সত্যাগ্রহী সাধক বা যােগীর জন্য পরম বিজ্ঞান ।
- "পূর্ব সতর্কতাই শত্রুকে জয় করার মহামন্ত্র”-এই সূত্রটি গীতায় অনুরণিত । সবাইকে অসত্য সম্পর্কে সতর্ক করে সত্যের পথকে অবলীলায় নির্দেশ করা হয়েছে । অহং, মায়া বা দেহ চেতনা থেকেই আত্মচেতনায় বা ঈশ্বর স্বভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার রাজপথ এ গীতা ।
- পরম পাপগ্রস্ত মানুষের জন্যেও গীতায় ধার্মিক হবার পথ রয়েছে ।
- প্রাত্যহিক জীবনে গীতার প্রয়ােগযােগ্যতা ও দৈনন্দিন কর্তব্য কর্ম করেও যে ঈশ্বরচৈতন্যে স্থিত থাকা যায়, এ যে শুষ্ক বুদ্ধিজীবির কেবল মানসিক বা কাল্পনিক কচকচি নয় বরং সাধারণ থেকে জ্ঞানবান মানুষের যে কেউ যাতে যােগের পথ ধরে সংসার আর দিব্যলােকের মধ্যে স্বছন্দে আসা-যাওয়া করতে পারে-তেমনি ডিজাইনে গীতার তাত্ত্বিক ও প্রায়ােগিক দিককে নির্দেশ করা হয়েছে ।
- গীতা কোন মতবাদ বা সম্প্রদায় সৃষ্টি করেনি ।
- যত মত ও পথের মানুষই হােন, যার যার-বিশ্বাস বা আচরণের মাধ্যমেই গীতার রাজপথে এসে উঠা যায় । দেহ থেকে আত্মায় উত্তরণ । বস্তু-চৈতন্য থেকে জীব চৈতন্যে, জীব থেকে মনােচৈতন্যে মন থেকে প্রাণে, প্রাণ থেকে পরমাত্মায় ।
- গীতা বিশ্বের সকলকে ডাক দিয়েছে, “ওঠ, জাগাে, তােমার সামনেই রাজপথ বিছানাে রয়েছে, ঈশ্বরের কাছে এসাে ।
- গীতার প্রশ্ন এসেছে ব্যক্তির কাছ থেকে তার উত্তর এসেছে বিশ্বমানবের জন্য ।
- গীতা নিত্য সত্যের বাতিঘর ।
- গীতা যুক্তিনির্ভর ।
- গীতা প্রতিটি মানুষের অন্তরঙ্গ অধ্যাত্ম সম্পদ বা শক্তিকে আবিষ্কারে সাহায্য করে ।
- তাই, দেশ-কাল-পাত্র নির্বিশেষে গীতা পাঠ্য ও অনুসরণীয়, তাই এটি সার্বজনীন ।