হিন্দুধর্ম ও একেশ্বরবাদ
হিন্দুধর্মানুষ্ঠান ও ধর্মাচার পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, সেখানে যেমন রয়েছে একেশ্বরের চিন্তা, ধ্যান-ধারণা, তেমনি রয়েছে বিভিন্ন অবতার এবং বহু দেব-দেবীর উপাসনা ও পূজা–অর্চনার কথা ।
এভাবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, হিন্দুধর্মাবলম্বীরা কি বহুঈশ্বরবাদী ? এ প্রশ্নের উত্তর হিন্দুধর্মগ্রন্থেই রয়েছে !
আমাদের পবিত্র বেদ ও উপনিষদে বলা হয়েছে, ব্রহ্ম বা ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় । তিনি একাধিকও নন । এই যে এক ঈশ্বরে বিশ্বাস, একেই বলে একেশ্বরবাদ । প্রচলিত বহু দেব-দেবীর উপাসনা হিন্দুধর্মের একটি বিশেষ দিক । তবে দেব-দেবীগণ ঈশ্বরেরই ভিন্ন ভিন্ন শক্তি বা গুণের অধিকারী ।
ঋকবেদে ইন্দ্র, অগ্নি, বায়ু উষা প্রভৃতি দেব-দেবীর স্তুতি রয়েছে । এঁরা ভিন্ন ভিন্ন শক্তির পরিচয় বহন করলেও এঁদের সম্মিলিত শক্তির কেন্দ্র হচ্ছেন ঈশ্বর । ঋগ্বেদে এ সম্পর্কে ঋষিদের উপলব্দি হচ্ছে: ‘একং সদ্ বিপ্রা বহুধা বদন্তি’ ।
অর্থাৎ সদ্বস্তু এক, বিপ্রগণ তাঁকে বহুপ্রকার বলে বর্ণনা করেন । অনুরূপভাবে, কঠোপনিষদে দেখা যায় ‘নেহ নানাস্তি কিঞ্চন’ (কঠ উপনিষদ ২/১/১১) ব্রহ্ম হতে পৃথক কিছু নেই । ব্রহ্ম এক এবং অদ্বিতীয়। বিশ্বে ঈশ্বরের সমান আর কেউ নেই । শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাতেও একেশ্বরের কথা বলা হয়েছে । ‘প্রভবঃ প্রলয়ঃ স্থানং বীজমব্যয়ম্’– (গীতা–৯/১৮) । এ কথার তাৎপর্য হচ্ছে - তাঁর থেকে জগতের উৎপত্তি, তাঁর দ্বারা স্থিতি এবং তাঁতেই হচ্ছে লয় । তিনিই জগতের নিধান – আধার ও আশ্রয় ।
সুতরাং অবতার ও দেব-দেবীগণ এক পরমেশ্বরেরই ভিন্ন ভিন্ন গুণ ও শক্তির প্রকাশ । এখানে আরও উল্লেখ্য, দেব-দেবীর আরাধনা করে মানুষ যে সাফল্য অর্জন করে তাতে এক ঈশ্বরের অনুগ্রহের প্রকাশ ঘটে ।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের বহুমুখী সাধনার মধ্যেও দেব-দেবীল আরাধনা ও ব্রহ্ম সাধনার মধ্যে এক সমন্বয় চেতনা রয়েছে । সাকার দেবী কালীও যিনি, নিরাকার এক ব্রহ্মও তিনি। যিনি কালী, তিনি ব্রহ্ম ।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, হিন্দুধর্মে বহু দেব-দেবীর পূজা-অর্চনার বিভিন্ন পদ্ধতি অনুশীলিত হলেও মূলত এক পরমেশ্বরেরই উপাসনা হচ্ছে । সুতরাং অবতার ও দেব-দেবী একই ঈশ্বরের বিভিন্ন প্রকাশ, ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়-এ বিশ্বাসকে বলা হয় একেশ্বরবাদ । এভাবে একেশ্বরবাদ হিন্দুধর্মের একটি বিশ্বাস এবং হিন্দুধর্মাবলম্বীদের একেশ্বরবাদী বলা যায় ।
আরও পড়ুন
হিন্দুধর্ম সম্পর্কে বিখ্যাত ব্যক্তিদের উক্তি