সনাতন ধর্ম মতে মানবজীবনের চূড়ান্ত লক্ষ কী ?
পার্থিব জীবনের কর্তব্য হিসেবে হিন্দুধর্ম প্রত্যেক মানুষের সামনে চারটি লক্ষ্য রেখেছে । এদের বলা হয় পুরুষার্থ । এই চারটি পুরুষার্থ হল ধর্ম, অর্থ, কাম ও মােক্ষ । এদের মধ্যে অর্থ ও কাম হল বৈষয়িক এবং ধর্ম ও মােক্ষ হল আধ্যাত্মিক । এই চার পুরুষার্থের মধ্যে মােক্ষই হল শ্রেষ্ঠ আবং প্রতিটি হিন্দুর অন্তিম কামনা হল মােক্ষ লাভ করা । বা বলা যায় যে, প্রতিটি হিন্দুর অন্তিম গতি হল মােক্ষ । মােক্ষ শব্দের অর্থ হল মুক্তি । বিশেষ অর্থে জন্ম ও পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তি । যখন মানুষের মনে এই উপলব্ধি হয় যে, এই বিশ্ব জগতে একমাত্র ব্রহ্মই আছেন এবং আমরা যা দেখছি, যা শুনছি তা সবই এক ব্রহ্মের বিভিন্ন রূপ মাত্র । এবং সেই হিসাবে সে নিজেও ব্রহ্ম, তখন তাকে বলে ব্রহ্মজ্ঞানী বা ব্রহ্মবিদ । মানুষ ব্ৰহ্মজ্ঞানী হলে কি হয় ? মানুষ ব্রহ্মজ্ঞানী হলে সে জন্ম ও পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তি পায় । মানুষ ভােগের মধ্য দিয়ে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করতে পারেনা, ত্যাগের মধ্য দিয়েই তা সম্ভব । ত্যাগ, তিতিক্ষা ও নিরন্তর সাধনার দ্বারাই ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করা সম্ভব । হিন্দু ধর্ম এর থেকেও অনেক বড় কথা বলে । হিন্দু ধর্ম বলে—"ব্ৰহ্মবিদ ব্রহ্মৈব ভবতি"। অর্থাৎ, ব্রহ্মজ্ঞানী নিজেই ব্রহ্ম হয়ে যায় ।
"যথোদকং শুদ্ধেশু দ্ধমাসিক্তং তাদৃগেব ভবতি মুনের্বিজানিতাত্মা ভবতি গৌতম"
অর্থাৎ, হে গৌতম, শুদ্ধ জলে শুদ্ধ জল মেশালে যেমন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়, তেমনি ব্রহ্মজ্ঞাণীও ব্রহ্মের সাথে বিলীন হয়ে যান । অর্থাৎ, কোন সাধক ব্রহ্মজ্ঞানী হলে তিনি নিজেই ব্ৰহ্ম বা ভগবান হয়ে যান ।
এই হল সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী যা একমাত্র হিন্দু ধর্মই বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থিত করতে পেরেছে । একমাত্র হিন্দু ধর্মই মানুষকে প্রথমে পশুত্ব থেকে মনুষ্যত্বে এবং সেই মনুষ্যত্ব থেকে দেবত্বে উন্নীত করার কথা শুনিয়েছে । পৃথিবীর আর কোন ধর্ম মানুষকে এই কথা শােনাতে পারেনি । কাজেই একজন হিন্দুর কাছে শ্রেষ্ঠ বা চরম আধ্যাত্মিক প্রাপ্তিহল ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করে নিজেকে মনুষ্যত্ব থেকে দেবত্বে উন্নীত করা এবং মােক্ষ বা মুক্তিলাভ করা ।
আরও পড়ুন :
মহাভারত সর্বপ্রথম বাংলায় অনুবাদ করেন কে ?