ধর্ম শব্দের অর্থ কি ?
ধর্ম’ শব্দটির অর্থ হল ‘যা ধারণ করে । ধৃ ধাতু + মন প্রত্যয় = ধর্ম । ধৃ ধাতুর অর্থ ধারণ করা । যা ধারণ করে মানুষ সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও পবিত্র জীবনযাপন করতে পারে তাকেই বলে ধর্ম । মানুষের ধর্ম মনুষ্যত্ব । যার মনুষ্যত্ব নেই, সে পশুর সমান । মানুষের মধ্যে পাশবিক প্রবৃত্তিও জেগে ওঠে । ধর্ম পালন করলে সেই পাশবিক প্রবৃত্তির বিনাশ ঘট । জেগে ওঠে মানবিকতা ও পবিত্রতায় পরিস্নাত এক শুদ্ধ কল্যাণ অনুভূতি । এই কল্যাণবােধই ধর্ম ।
হিন্দুধর্মের সাধারণ লক্ষণ
মনুসংহিতায় বেদ, স্মৃতি, সদাচার এবং বিবেকের বাণী—এই চারটিকে বলা হয়েছে সনাতন বা হিন্দুধর্মের লক্ষণ। বেদে বিশ্বাস রেখে স্মৃতির অনুশাসন মেনে এবং মহাপুরুষদের সদাচার থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জীবনপথে চলতে হয়। এতেও যদি সমস্যার সমাধান না হয় তখন সিদ্ধান্ত নিতে হয় নিজেকেই । শুনতে হয় নিজের বিবেকের বাণী। কাজে লাগাতে হয় । নিজের অভিজ্ঞতাপ্রসূত কর্তব্য-অকর্তব্যের জ্ঞানকে । মনুসংহিতায় ধর্মের আরও দশটি বাহ্য লক্ষণের কথা বলা হয়েছে যার ভেতর ধর্মের স্বরূপ প্রকাশ পায় —
“ধৃতিঃ ক্ষমা দমােহস্তেয়ং
শৌচমিন্দ্রিয়-নিগ্রহঃ।।
ধীর্বিদ্যা সত্যমক্রোধো
দশকং ধর্মলক্ষণম্ ॥”
অর্থাৎ সহিষ্ণুতা, ক্ষমা, দয়া, চুরি না করা, শুচিতা, ইন্দ্রিয়সংযম, শুদ্ধ বুদ্ধি, জ্ঞান, সত্য এবং ক্রোধহীনতা—এই দশটি লক্ষণের মধ্যে ধর্মের স্বরুপ প্রকাশ পায় । সব কিছুর মূলে ঈশ্বর । সুতরাং ধর্মের মূলও ঈশ্বর। ঈশ্বরকে ভক্তি করা ধর্মের মূল কথা । যা ধর্মের বিপরীত তাই অধর্ম । যেমন চুরি না করা ধর্ম, তাহলে চুরি করা অধর্ম। সহিষ্ণুতা বা ধৈর্য ধর্ম, সুতরাং । অসহিষ্ণুতা বা ধৈর্য হারানাে অধর্ম ।
মনুসংহিতায় বলা হয়েছে :
“ধর্ম এব হতাে হন্তি,
ধর্ম রক্ষতি রক্ষিতঃ ।
ধর্ম এব হতো হস্তি, ধর্ম রক্ষতি রক্ষিত
তস্মাদধর্মো ন হস্তব্যো,মা নাে ধর্মোহতােবধীৎ ।।"
এর অর্থ হল ধর্ম নষ্ট হলে সে ধর্মনষ্টকারীকে নাশ করে । আর রক্ষিত হলে তাকে রক্ষা করে। তাই ধর্ম নষ্ট করতে নেই । ধর্ম যেন আমাদের নষ্ট না করে । সুতরাং অধর্ম হচ্ছে ধর্ম নষ্ট করা । ধর্মবিরােধী পথে চলা । অধর্ম মানুষকে অসৎপথে টেনে নেয় । ধর্ম তাকে সৎপথে রাখে । ধর্মের জয় হয় আর অধর্মের ঘটে পরাজয় । ধার্মিক সাময়িকভাবে কষ্ট পেতে পারেন । কিন্তু পরিণামে তিনি জয় ও শান্তি লাভ করেন ।