Table of Content (toc)
ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনী
"সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরনং ব্রজ ।
অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ।।
-- গীতা ১৮/৬৬
" সর্বধর্ম পরিত্যাগ করি অনুক্ষণ
একমাত্র আমাকেই কর হে শরণ ।
সর্বপাপ হতে মুক্ত করিব নিশ্চয়
শোক নাহি কর তুমি ওহে ধনঞ্জয় ।।"
কে এই পরমপুরুষ যিনি জীবনকে সমস্ত পাপ থেকে উদ্ধার করার বলিষ্ঠ প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ? হ্যা, ইনিই শ্রীমদভগবদগীতার প্রাণপুরুষ, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ।
জন্ম ও শৈশব লীলা
ভােজ রাজবংশের রাজা কংস পিতা উগ্রসেনকে সিংহাসনচ্যুত করে মথুরায় রাজত্ব করছেন । জেঠতুতাে বােন দেবকীকে শূর বংশের বসুদেবের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন । বর কনেকে রথে করে নেওয়া হচ্ছে । রথের সারথি হয়েছেন কংস নিজে । এমন সময় আকাশে এক দৈববাণী হল-
হে নির্বোধ, যাকে তুমি রথে নিয়ে যাচ্ছ, সেই দেবকীর গর্ভের অষ্টম সন্তান তােমার প্রাণ হরণ করবে ।
দৈববাণী শুনে কংস ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন । খড়গ হাতে দেবকীকে হত্যা করতে উদ্যত হলেন । বর বসুদেব সবিনয়ে কংসকে বললেন, “দেবকীকে আপনি বধ করবেন না । দেবকীর গর্ভে জন্মগ্রহণকারী সকল সন্তানকেই আপনার হাতে তুলে দেওয়া হবে । আপনি তাদের হত্যা করতে পারবেন ।” একথা শুনে কংস নিবৃত্ত হল ।
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে কংস দেবকী ও বসুদেবকে কারাগারে রুদ্ধ করে রাখলেন । কারাগারেই একে একে দেবকীর ছয়টি সন্তানকে জন্মের পরই কংস হত্যা করলেন । সপ্তম সন্তানের সন্ধান পেলেন না । দেবকীর অষ্টম গর্ভে এলেন শ্রীকৃষ্ণ । ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথির গভীর রজনীতে শ্রীকৃষ্ণ কংসের কারাগারে জন্মগ্রহণ করলেন । সে ছিল এক ভীষণ দুর্যোগময় রজনী । প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে প্রকৃতি ধারণ করেছে ভীষণ মূর্তি । তখন যােগমায়ার প্রভাবে প্রহরীরা হয়েছে অচেতন । দৈব নির্দেশে সদ্যোজাত পুত্রকে নিয়ে বসুদেব কারাগার থেকে বের হয়ে গােকুলে নন্দরাজ পত্নী যশােদার পাশে রাখলেন এবং তার নবজাত কন্যাকে নিয়ে এসে দিলেন দেবকীর কোলে ।
পরদিন ভােরে দেবকীর গর্ভের অষ্টম সন্তানকে বধ করার জন্য কারাগারে ছুটে এলেন কংস । দেবকীর কাকুতি মিনতি অগ্রাহ্য করে তিনি শিশু কন্যাটিকে আছাড় মারবার জন্য যেই তুলেছেন, অমনি সে উধ্বদিকে চলে যেতে যেতে বলে গেল
-“কংস, তােমাকে বধ করবার জন্য নারায়ণ জন্মগ্রহণ করেছেন ।”-একথা শুনে কংস মৃত্যুর আশঙ্কায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন । কংস সিদ্ধান্ত নিলেন মথুরার সমস্ত শিশুদের হত্যা করা হবে । পাঠালেন তিনি পুতনা রাক্ষসীকে ।
বিষাক্ত স্তন পান করিয়ে পুতনা অনেক শিশুকে নিহত করল । কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ এই পুতনার স্তন এমন কঠোরভাবে পান করেন যে যন্ত্রণায় পুতনা তৎক্ষণাৎ মৃত্যুমুখে পতিত হয় । এই সংবাদে কংস বুঝতে পারেন, কৃষ্ণই তাঁর প্রধান শত্রু ।
কংস বধ
যতই দিন যাচ্ছে ততই শ্রীকৃষ্ণের প্রতি কংসের আক্রোশ বৃদ্ধি পাচ্ছে । শেষে তিনি অক্রুরকে পাঠালেন শ্রীকৃষ্ণের কাছে । অক্রুর শ্রীকৃষ্ণকে কংসের নিমন্ত্রণ ও গুপ্ত অভিসন্ধির কথা জানান । কৃষ্ণ ও বলরাম নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে মথুরায় যান । মল্লযােদ্ধারা শ্রীকৃষ্ণ ও বলরামের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয় । কিন্তু না, তারা এদের সামনে টিকতে পারল না, কৃষ্ণ ও বলরামের হাতে তারা পরাজিত ও নিহত হয় । এই ভীষণ দৃশ্য দেখার পর কংস ক্রোধে ও ক্ষোতে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়লেন । তিনি মল্লক্ষেত্রে উপস্থিত নন্দ, বসুদেব এবং পিতা উগ্রসেনকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে নির্দেশ দিলেন । কংসের এ আদেশ শুনে শ্রীকৃষ্ণ আর বিলম্ব করলেন না । কংসের মঞ্চে লাফিয়ে উঠে তাকে চুল ধরে মাটিতে নামালেন এবং সেখানেই তাকে হত্যা করলেন । এরপর শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম দেবকী-বসুদেবসহ অন্যান্য ব্যক্তিদের মুক্ত করেন এবং কংসের পিতা উগ্রসেনকে মথুরার রাজপদে বরণ করেন । এরপর শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম মথুরায় পিতা মাতার সঙ্গে বাস করতে থাকেন ।
জরাসন্ধ ও শিশুপাল বধ
অত্যাচারী রাজা কংস নিহত হলেও মানুষের জীবনে শান্তি আসছে না । কংসের শ্বশুর জরাসন্ধ শ্রীকৃষ্ণের উপর ভীষণ রেগে গেলেন । শ্রীকৃষ্ণকে বিনাশ করার ইচ্ছায় বিরাট সেনাবাহিনী নিয়ে তিনি মথুরা আক্রমণ করলেন । শ্রীকৃষ্ণ ও বলরাম অল্প শক্তি নিয়ে দৈব অস্ত্রের সহায়তায় জরাসন্ধের বাহিনীকে পরাস্ত করে তাকে বন্দী করলেন । বলরাম জরাসন্ধকে হত্যা করতে যাচ্ছিলেন । কৃষ্ণ তাঁকে সেবারের মত ছেড়ে দিলেন ।
এ ঘটনায় জরাসন্ধ লজ্জাবােধ করলেন বটে কিন্তু পরাজয়ের গ্লানিতে পর পর সাত বার তিনি মথুরা আক্রমণ করলেন ।
পরে শ্রীকৃষ্ণের সিদ্ধান্তে ভীম জরাসন্ধকে বধ করলেন ।
এবার শিশুপালের পালা ।
যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে ভীষ্ম কৃষ্ণকে অর্থ প্রদান করেন । এতে চেদিরাজ শিশুপাল ঈর্ষান্বিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণের নিন্দা করতে শুরু করেন । এ পর্যন্ত শ্রীকৃষ্ণ শিশুপালের শত অপরাধ মার্জনা করে তার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেন । এই বার তিনি সুদর্শন চক্ৰদ্বারা শিশুপালের শিরচ্ছেদ করলেন ।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ ও ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা
কংস, জরাসন্ধ, শিশুপাল ও তাদের অনুগামী কয়েক জন অত্যাচারী রাজার বিনাশ ঘটলেও তখনও বেশ কিছু স্বার্থান্বেষী লােভী অত্যাচারী রাজা রয়ে গেছেন । এঁদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাসম্পন্ন ধৃতরাষ্ট্র ও তার দুর্যোধনাদি শত পুত্র রাজ্য লােভে এক সময় অত্যন্ত গর্হিত কর্মে লিপ্ত হয়েছিলেন । পাণ্ডু ও ধৃতরাষ্ট্র ছিলেন দুই ভাই । ধৃতরাষ্ট্র জন্মান্ধ বলে ছােট ভাই পাণ্ডু রাজা হন । পাণ্ডুর মৃত্যুর পর পঞ্চপাণ্ডবেরই রাজ্য প্রাপ্য । কিন্তু ধৃতরাষ্ট্র ধর্মাধর্ম বিচার না করে নিজ পুত্রকে সমর্থন করলেন এবং পাণ্ডবদের কোন অনিষ্ট করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত তিনি রাজ্য দু ভাগ করে দুর্যোধন ও যুধিষ্ঠিরকে প্রদান করলেন । ইন্দ্রপ্রস্থ হল পাণ্ডবদের নতুন রাজধানী ।
অর্ধেক রাজ্যের অধিপতি হয়েও দুর্যোধন মােটেই খুশি নন । গােটা রাজ্যটা তার চাই। কপট পাশা খেলায় পাণ্ডবদের হারিয়ে বার বছরের জন্য বনবাসে এবং এক বছর অজ্ঞাতবাসে পাঠালেন । শর্ত হল, তের বছর পর পাণ্ডবগণকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে তাদের রাজ্য ।
পাণ্ডবগণ ছিলেন ধর্মপরায়ণ । পূর্ব শর্তানুযায়ী পাণ্ডবগণ বনবাস জীবনের পরে দুর্যোধনের নিকট তাদের রাজ্য ফিরে চাইলেন । কিন্তু অতি লােভী দুর্যোধন পাণ্ডবদেরকে ‘সূচাগ্র মেদিনী’ দিতে সম্মত নন । এতে পাণ্ডবগণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন । শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শ চাইলেন তাঁরা । শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে পাণ্ডবদের রয়েছে আত্মীয়তার সম্বন্ধ । এ ছাড়া অর্জুন হলেন শ্রীকৃষ্ণের সখা । দুর্যোধন ও ধৃতরাষ্ট্রের সব রকম অন্যায়ের কথা ছিল তার জানা । পাণ্ডবদের পক্ষ হয়ে তিনি গেলেন দুর্যোধনের নিকট । উদ্দেশ্য আলােচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা । কিন্তু না, দুর্যোধনের অনমনীয় মনােভাবের ফলে শ্রীকৃষ্ণের চেষ্টা সফল হল না। ফলে কুরু-পাণ্ডবের যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠল । কুরুক্ষেত্র নামক স্থানে যুদ্ধ হল । এই ভীষণ যুদ্ধে উভয় পক্ষের বহু লােক, বহু রাজা ও যােদ্ধা নিহত হলেন। যুদ্ধ শেষে ধর্মপ্রাণ পান্ডবগণ রাজ্য শাসনের ভার পেলেন । অশ্বমেধ যজ্ঞ করে নিজেদের প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করলেন ।
শ্রীমদ্ভগবদগীতা
ধর্মরাজ্য সংস্থাপনে শ্রীকৃষ্ণের গৌরবময় ভূমিকা স্মর্তব্য । তবে সম্ভবত শ্রীকৃষ্ণের শ্রেষ্ঠ অবদান হচ্ছে তার মুখনিঃসৃত বাণী যা পুস্তকাকারে নাম হয়েছে শ্রীমদ্ভগদ্গীতা । কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক পূর্বক্ষণে পাণ্ডবদের সেনাপতি অর্জুন হঠাৎ তার রথের সারথি শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, “আমি যুদ্ধ করব না, যুদ্ধ করলে আত্মীয়-স্বজন, পিতামহ ভীষ্ম, গুরুদেব দ্রোণাচার্য প্রমুখ পূজনীয় ব্যক্তিদেরকে হত্যা করতে হবে । এছাড়া উভয়পক্ষের রাজন্যবর্গ, সৈন্য সামন্ত নিহত হলে দেশ ও সমাজের প্রভূত অকল্যাণ হবে । এটি হবে অধর্মাচরণ; সুতরাং আমি যুদ্ধ করব না ।”
শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করানাের ইচ্ছায় ধর্মের সারকথা তুলে ধরলেন । তিনি বললেন, “দেখ অর্জুন, তুমি জ্ঞানবান, শ্রেষ্ঠ বীর, তুমি জীবনে শ্রেয় লাভ করতে যাচ্ছ, জীবনের পরম উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈশ্বর প্রাপ্তি । যুদ্ধ করেও তুমি ভগবানের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে । তুমি সর্বতােভাবে একমাত্র ভগবানের শরণ লও। তিনি তােমাকে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত করবেন ।”
শ্রীকৃষ্ণ যে স্বয়ং ভগবান অর্জুনকে এ কথা বুঝানাের জন্য তিনি তার বিশ্বরূপ দর্শন করালেন। অর্জুনের মােহ দূর হল । তিনি যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলেন এবং জয়লাভ করলেন । শ্রীকৃষ্ণের এই উপদেশ বাণীর মধ্যে রয়েছে সনাতন ধর্মের সার কথা ।
অন্তর্ধান
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষে শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকায় ফিরে যান । দ্বারকায় দীর্ঘদিন রাজত্ব করেন শ্রীকৃষ্ণ । বলরাম ধ্যানযােগে দেহ ত্যাগ করলে শ্রীকৃষ্ণও নশ্বর দেহ ত্যাগ করার সংকল্প করেন । বনে প্রবেশ করে একটি অশ্বথ বৃক্ষের তলে বসে আছেন শ্রীকৃষ্ণ, এমন সময় জরা নামক এক ব্যাধ দূর থেকে ভূমিতে উপবিষ্ট কৃষ্ণকে মৃগ মনে করে তাঁর চরণ শরবিদ্ধ করল । এই শরাঘাতে শ্রীকৃষ্ণ ইহলীলা সংবরণ করেন ।
hare krishna
ReplyDeleteHare Krishna❤️
Deletewe need more information about krishna...
ReplyDeleteঅবশ্যই পাবেন🙏
Deleteশ্রীকৃষ্ণের 24 জন সখার নাম জানতে চাইছি।দয়া করে বলবেন
ReplyDelete২৪ জন সখীর নাম আমাদের সংগ্রহে নেই । আমরা অষ্টসখীর নামগুলো বলছিঃ
Deleteললিতা সখী, বিশাখা সখী, চম্পকলতা সখী, চিত্ৰা সখী, তুঙ্গবিদ্যা সখী, ইন্দুলেখা সখী, রঙ্গদেবী সখী, সুদেবী সখী