ভাগবত পুরাণ নিয়ে বিস্তারিত
শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ আমাদের অন্যতম ধর্মগ্রন্থ । পুরাণ শব্দের অর্থ হলো প্রাচীন কথা । সৃষ্টি, ধর্ম, আচার ব্যবহার, আখ্যান ও উপাখ্যান ভিত্তিক এক প্রকার ধর্মগ্রন্থকে বলা হয় পুরাণ । ব্যাস প্রভৃতি মুনি রচিত দেবতা, অসুর, গন্ধর্ব ও মানবদের বৃত্তান্ত, সৃষ্টিতত্ত্ব, ব্রহ্ম ও তার সাকার-নিরাকার বর্ণনা, পূর্বতন রাজন্যবর্গের বংশাবলি, ছন্দ, অলংকার, নাট্যকলা প্রভৃতি বিচিত্র বিষয় নিয়ে রচিত ধর্মগ্রন্থ পুরাণ নামে আখ্যায়িত হয়েছে ।
ভাগবত পুরাণকে বলা হয় শ্রীমদ্ভাগবত । মহর্ষি বেদব্যাস এই পুরাণ রচনা করেন । এতে ১২ টি স্কন্দ বা অধ্যায় আছে । শৃঙ্গী নামক এক মুনিপুত্র রাজা পরীক্ষিতের আচরণে ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে এই অভিশাপ দেন যে সাত দিনের মধ্যে তক্ষক নামক সর্পের দংশনে পরীক্ষিত মারা যাবেন । মৃত্যু সুনিশ্চিত জেনে পরীক্ষিত ধর্মকথা শুন্তে চান । তখন ব্যাসদেবের পুত্র শুকদেব রাজা পরীক্ষিতকে ভাগবতের কথা শোনান । পরবর্তীকালে নৈমিষারণ্য নামক ঋষিদের এক ক্ষুদ্র আবাসস্থলে সূত সেই পুরাণ ঋষিদের শোনান ।
ভাগবত পুরাণের বিষয়বস্তু
সৃষ্টিতত্ত্ব, ব্রহ্মার সৃষ্ট, বিষ্ণুর বরাহাতার, ধ্রুবচরিত্র, প্রহ্লাদচরিত্র, চন্দ্র ও সূর্যবংশের বিবরণ এবং বিশেষ করে শ্রীকৃষ্ণরচিত মথুরা ও বৃন্দাবন লীলা, যদুবংশের কীর্তি ও ধ্বংস প্রভৃতি এই পুরাণের বিষয়বস্তু । ভাগবত বৈষ্ণবদের ধর্মগ্রন্থ । এই গ্রন্থে শ্রীকৃষ্ণ উপাস্য দেবতা । ভাগবতে তন্ময় চিত্তে ভগবানে আত্মসমর্পণের কথা বলা হয়েছে ।
ভক্তি এখানে মূখ্য । শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান । ভাগবতে শ্রীকৃষ্ণচরিতই ভক্তিরসে সিক্ত হয়ে অপূর্ব কবি ভাষায় বর্ণিত হয়েছে ।
ভাগবত পুরাণ আমাদের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ পুরাণ এবং বিশেষ বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ভাগবত এক অবশ্যপাঠ্য ধর্মগ্রন্থ । ভাগবত পাঠ করলে শ্রীকৃষ্ণ অর্থাৎ ঈশ্বরে ভক্তি সুদৃঢ় হয় । হৃদয় পবিত্র হয় । আত্মা শান্তি লাভ করে । পুরাণ হিসেবে ও সাহিত্য হিসেবেও ভাগবতের গুরুত্ব শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার্য । ভক্তিমূলক ধর্মশাস্ত্র হিসেবে ভাগবতের স্থান সুউচ্চে ।