হিন্দুধর্মের বিবাহ সম্পর্কিত কিছু তথ্য
হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে সমগ্র জীবনে যে দশটি সংস্কার বা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান রয়েছে তন্মধ্যে বিবাহ শ্রেষ্ঠ । বিবাহের দ্বারা পুরুষ সন্তানের জনক হয়ে লাভ করেন পিতৃত্ব এবং নারী জননীরূপে লাভ করেন মাতৃত্ব । বিবাহের মাধ্যমে মাতা, পিতা, পুত্র, কন্য প্রভৃতি নিয়ে গড়ে ওঠে একটি সুন্দর সংসার যাকে কেন্দ্র করে প্রেম, প্রীতি, স্নেহ, বাৎসল্য প্রভৃতি মানব মনের সুকুমার বৃত্তিগুলো পরিপূর্ণরূপে বিকশিত হয় ।
'বিবাহ' শব্দটি বি-পূর্বক বহু ধাতু ও ঘঞ্ প্রত্যয়যোগে গঠিত । বহ্-ধাতুর অর্থ 'বহন করা' এবং 'বি' উপসর্গের অর্থ বিশেষরূপে । সুতরাং 'বিবাহ' শব্দের অর্থ বিশেষরূপে ভারবহন করা । বিবাহের ফলে পুরুষকে স্ত্রীর ভরণ-পোষণ এবং মানসম্ভ্রম রক্ষার সার্বিক ভার বহন করতে হয় ।
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী বিবাহের প্রকারভেদ
সৃতিশাস্ত্রের বিখ্যাত গ্রন্থ 'মনুসংহিতা'য় আট প্রকার বিবাহের উল্লেখ আছে : ব্রাহ্ম, দৈব, আর্য, প্রাজাপত্য, আসুর, গান্ধর্ব, রাক্ষস এবং পৈশাচ । এই আট প্রকার বিবাহের মধ্যে ব্রাহ্ম, দৈব, আর্য ও প্রাজাপত্য প্রশস্ত । বর্তমানে সমাজে ব্রাহ্মবিবাহই স্বীকৃত ও প্রচলিত । কন্যাকে বস্ত্র দ্বারা আচ্ছাদন করে এবং অলংকার দ্বারা সজ্জিত করে বিদ্বান ও সদাচারী বরকে স্বয়ং আমন্ত্রন করে যে কন্যাদান করা হয় তাকে বলা হয় ব্রাহ্মবিবাহ ।
সমাজে গান্ধর্ব বিবাহেরও প্রচলন আছে । নারী-পুরুষ পরস্পর শপথ করে মাল্যবিনিময়ের মাধ্যমে যে বিবাহ সম্পন্য করে তার নাম গান্ধর্ব বিবাহ । মহাভারতে দুষ্যন্ত এবং শকুন্তলার বিবাহ গান্ধর্ব বিবাহের প্রকৃষ্ট উদাহরণ ।
হিন্দুর বিবাহে কতকগুলো বিধি-বিধান শাস্ত্রীয় আর কতকগুলো অনুষ্ঠান স্ত্রী-আচার । শুভলগ্নে নারায়ণ, অগ্নি, গুরু, পুরোহিত, আত্মীয় এবং আমন্ত্রিত অতিথিগণকে সাক্ষী রেখে মঙ্গলমন্ত্রের উচ্চারণ, উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে বিবাহনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় । বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হয় যজ্ঞের মাধ্যমে ।
বিবাহের সর্বশ্রেষ্ঠ মন্ত্র
"যদেতৎ হৃদয়ং তব তদস্তু হৃদয়ং মম ।
যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব ।।"
-- তোমার এই হৃদয় আমার হোক, আমার হৃদয় হোক তোমার । এই মন্ত্রের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গড়ে ওঠে গভীর একাত্মতার সম্পর্ক । হিন্দুসমাজে বিবাহ হলো ধর্মীয় জীবনের চর্চা । কোনো ছেলেখেলা একদমই নয় ।
স্ত্রী হচ্ছেন পুরুষের সহধর্মিণী, স্ত্রীকে বাদ দিয়ে পুরুষের কোন কার্যই সম্পন্ন হয় না ।