স্বর্গ-নরক নিয়ে বিস্তারিত
স্বর্গ
সাধারণভাবে মানুষ জানে শুভকর্মের পূণ্যময় ফল ভোগ করার জন্য মানুষের স্বর্গ প্রাপ্তি ঘটে । আবার পাপকর্মের ভোগ করার জন্য কর্মকর্তাকে নরক যন্ত্রনা ভোগ করতে হয় । শ্রুতিতে বলা হয়েছে --"স্বর্গকামো যজেত" । অর্থাৎ স্বর্গ কামনা করে যজ্ঞ করবে । স্বর্গ কামনা করে যাগ যজ্ঞাদি অনুষ্ঠান করবে, তার ফলে স্বর্গলাভ হবে ।
স্বর্গের বিবরণ
পুরাণাদি শাস্ত্রে স্বর্গ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে । স্বর্গ হলো দেবতাদের বাসস্থান । দেবতাদের রাজা ইন্দ্র স্বর্গের রাজা । ইন্দ্র কোন বিশেষ ব্যক্তির নাম নয় । এটি স্বর্গের রাজার পদবী । ইন্দ্র যে প্রাসাদে বাস করেন তার নাম হলো বৈজয়ন্ত । ঐরাবত নামে হাতী এবং উচ্চৈশ্রবা নামের অশ্ব ইন্দ্রের বাহন । ইন্দ্রের দেবসভার নাম সুধর্ম । সর্গের উদ্যানের নাম সুধর্ম । চিরবসন্ত বিরাজিত অমরাবতী স্বর্গের রাজধানী ।
পূণ্যফলে স্বর্গবাস হয় বটে, তবে ভোগের মধ্য দিয়ে পূণ্য ক্ষয় হয় । পূণ্য নিঃশেষ হলে স্বর্গ ভোগের অবসান হয় । তখন জীবকে পুণরায় মর্ত্যলোকে দেহধারণ করে জন্মগ্রহণ করতে হয় । এখানে উল্লেখ্য যে, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জীবের দেহ নষ্ট হয় । তখন কর্মফল ভোগের জন্য সুক্ষ্মদেহের উদ্ভব হয় । ঐ সুক্ষ্মদেহ নিয়েই জীব স্বর্গ/নরক ভোগ করে থাকে ।
এখন প্রশ্ন হলো কোন ব্যক্তি মৃত্যুর পর স্বর্গে যাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন, এ ব্যাপারে শাস্ত্র নির্দেশ হচ্ছে-
"সর্বহিংসানিবৃত্তাঃ যে নরাঃ সর্বংসহাশ্চ যে ।
সর্বস্যাশ্রয়ভূতাশ্চ তে নরাঃ স্বর্গগামিনঃ ।। "
অর্থাৎ যারা সকল হিংসা ত্যাগ করেছেন, যারা সহিষ্ণু হয়ে সব কিছু সহ্য করেন, যারা সকলের প্রতিপালন করেন, তারা স্বর্গে গমন করেন । মোটকথা পূণ্যবান ব্যক্তি মাত্রই স্বর্গে গমনের যোগ্য বলে বিবেচিত হয়ে থাকেন ।
নরক
মানুষ যেমন পূণ্যকর্ম করতে পারেন, তেমনি আবার পাপকর্মও তার পক্ষে করা অসম্ভব নয় । পাপকর্মের জন্য তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয় । এই শাস্তিভোগের স্থানটিকে বলা হয় নরক । তামিস্র, অন্ধতামিস্র, রৌরব, মহারৌরব, কুম্ভীপাক, অসিপত্রবন ইত্যাদি নরক ।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে ৮৬ টি নরককুন্ডের বর্ণনা রয়েছে । এখানে কয়েকটি অপরাধ এবং তার জন্য কীরকম নরক যন্ত্রনা ভোগ করতে হয় তা বর্ণনা করা হলো :
১. যারা পরধন, পরস্ত্রী ও পুত্র অপহরণ করে, যমপুরুষেরা তাদেরকে কঠিন পাশে আবদ্ধ করে তামিস্র নরকে ফেলে দেয় । এই নরক নিবিড় অন্ধকারাবৃত । পাপী এখানে পতিত হয়ে খাদ্য ও পানীয়ের অভাবে এবং যম কিঙ্করদের হাতে নিপীড়িত হয়ে যন্ত্রণা ভোগ করে ।
২. যে লোক জীবিত অবস্থায় যে প্রকারে অন্যের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ করেছিল, সেইরূপ হিংসার শিকার হয়ে মৃত্যুর পর তাকে নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় ।
এভাবে পাপীগণকে নরকে শাস্তি প্রদান করা হয় । তবে পাপের তারতম্য অনুসারে পাপীদের নরক ভোগের যন্ত্রণারও পার্থক্য হয়ে থাকে । পাপ ভোগ শেষ হলে পাপী নরক যন্ত্রণা হতে নিষ্কৃতি লাভ করে । তারপর কর্মফল অনুযায়ী জীবের পুনর্জন্ম হয়ে থাকে ।
স্বর্গ ও নরক বলতে আসলে কিছুই নেই
ReplyDelete