মুনি ও ঋষি পার্থক্য
মুনি ঋষিরা ছিলেন বৈদিক যুগের শিক্ষক । বৈদিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের উদ্ভাবক ছিলেন এই মুনি-ঋষিরা ।
তাই অনেক হিন্দুই মুনি-ঋষিদের নিয়ে জানার ইচ্ছা পোষণ করেন । কিন্তু অনেক জানার পরেও রয়ে যায় একটি জটিল প্রশ্ন । সেটি হলো, মুনি কাদের বলে আর ঋষিই বা কাদের বলে ? তাই আজকে মুনি-ঋষিদের নিয়ে আপনাদের সকল সংশয় দূর করার চেষ্টা করবো ।
মুনি কাকে বলে ?
বৈদিক যুগে ধার্মিক লোকের কোন অভাব ছিল না । তাদের মধ্যে অনেকেই ঈশ্বর ও ধর্ম সম্পর্কে জানতে গভীর অরণ্যে তপস্যা করতেন । এই মহাত্মাগণ তাদের তপস্যার বলে সমস্ত লোভ-লালসা ত্যাগ করেছিলেন । এই মহাত্মাদিগদের বলা হতো মুনি ।
ঋষি কাকে বলে ?
যেইসব মুনি তপস্যাবলে বেদের মন্ত্র প্রকাশ করতে পারতেন, তাদের বলা হতো ঋষি । সুতরাং এখান থেকে এটি অবশ্যই বোঝা যায় যে, সব ঋষিই মুনি কিন্তু সকল মুনি ঋষি নয় । মুনির স্থান অতিক্রম করেই ঋষির স্থানে অধিষ্ঠিত হতে হয় । এজন্য ঋষিরা ছিলেন মুনিদের থেকে উচ্চস্তরের । এখানে কয়েকজন ঋষির নাম উল্লেখ করছি : গার্গী, লোপামুদ্রা, কশ্যপ, বশিষ্ট, বিশ্বামিত্র, গৌতম, কণ্ব, বিশ্ববালা প্রভৃতি ৷
ঋষিদের সাতটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে । যথা : ব্রহ্মর্ষি, মহর্ষি, দেবর্ষি, কান্ডর্ষি, রাজর্ষি, পরমর্ষি ও শ্রুতর্ষি ।
ব্রহ্মর্ষি
ব্রহ্ম বা ঈশ্বর সম্পর্কে যেসব ঋষিদের বিশেষ জ্ঞান ছিল, তাদের বলা হতো ব্রহ্মর্ষি । যেমন : বশিষ্ট ।
মহর্ষি
ঋষিদের মধ্যে যারা মহান ও প্রধান ছিলেন তাদের বলা হতো মহর্ষি = মহা + ঋষি । যেমন : কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস (বেদকে চার ভাগে বিভক্ত এবং মহাভারত রচনা করেছিলেন যিনি )
দেবর্ষি
দেবতা হয়েও যারা ঋষি ছিলেন তাদের বলা হতো দেবর্ষী = দেবতা + ঋষি । যেমন : নারদ ।
কান্ডর্ষি
বেদের রয়েছে দুইটি কান্ড (জ্ঞানকান্ড ও কর্মকান্ড) এর মধ্যে যে কোন একটির বিষয়ে যাদের বিশেষ জ্ঞান ছিল তাদের বলা হতো কান্ডর্ষি । যেমন : জৈমিনি ।
রাজর্ষি
রাজা হয়েও যিনি ঋষি বা ঋষির মতো আচরন করেন তাকে বলা হতো রাজর্ষি । যেমন : রাজা জনক (মাতা সীতার পিতা)
পরমর্ষি
পরমব্রহ্ম বা ঈশ্বরকে যিনি দর্শন করেছেন তাকে বলা হতো পরমর্ষি । যেমন : পৈল ।
শ্রুতর্ষি
যেসব ঋষিগণ শুনে শুনে বেদ মন্ত্র লাভ করেছিলেন তাদের বলা হতো শ্রুতর্ষি । যেমন : সুশ্রুত (বিশ্বামিত্রের পুত্র এবং বিশ্ব বিদিত চিকিৎসাশাস্ত্র সুশ্রুতসংহিতা রচনাকারী) ।